শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ-সিওপিডি রোগে আক্রান্ত দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ১১ ভাগের বেশি বা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ।
বিএসএমএমইউ কর্তৃক পরিচালিত এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল বিএসএমএমইউতে বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও বক্তারা একথা জানান। অনুষ্ঠা প্রধান অতিধি ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা.কনক কান্তি বড়ুয়া।
উপাচার্য বলেন, ধূমপান পরিহার ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের ব্রেন, হার্ট, লিভারের মতোই ফুসফুসও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সিওপিডি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি প্রতিরোধেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করতে হবে ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বায়ু দূষণসহ সকল ধরনের দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা শহরের বায়ুসহ পরিবেশ দূষণের মাত্রা অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। ঢাকা শহরের অধিবাসীরা বায়ু দূষণযুক্ত পরিবেশের মধ্যে বসবাস করায় তারা সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখনই অধিকমাত্রায় সচেতন হতে হবে।
বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডি ধূমপায়ীদের বেশি হতে দেখা যায়। এটা ফুসফুসের একটা অসুখ যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সিওপিডির ফলে কাশি দেখা দেয়, সেই সঙ্গে কফ, নিঃশ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দসহ নানা উপসর্গ থাকে। ধূমপানের সঙ্গে এ অসুখটি যুক্ত।
যাদের এটা হয়, তাদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোঁয়া, ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদের জন্যেও এই রোগটি দেখা দিতে পারে। ২০০২ সাল থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দিবসটি প্রতিপালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন।
এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০৫ সালে তিন মিলিয়ন লোক এই রোগে রোগে মারা গেছেন। ২০০২ সালে সেখানে সিওপিডি রোগ মৃত্যুর ৫ম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, নিকট ভবিষ্যতে তা ৩য় মৃত্যুর কারণ হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে বক্ষব্যাধি বিভাগ, বিএসএমএমইউ কর্তৃক পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানকার ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বের জনসংখ্যার ১১.৪ ভাগ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ১১.৭ ভাগ পুরুষ এবং ১০.৬ ভাগ মহিলা। সিওপিডি রোগ প্রতিরোধে তামাকের চাষ ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
সিগারেট ও তামাক কোম্পানীগুলো বন্ধ হলে হ্রাস পাবে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ও অনেকটাই কমে আসবে। কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ধূমপান পরিহার ও পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বর্তমানে মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে-এটাও প্রতিরোধ করতে হবে।
বার্তা কক্ষ ,২৩ নভেম্বর ২০১৯