দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ শুরু করলো অস্ট্রেলিয়া।আজ এডিলেইড ওভালে প্রথমে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে যায় অজিরা।ওপেনার হিসেবে অ্যারন ফিঞ্চ এবং ডেভিড ওয়ার্নার ব্যাট করতে নামেন।
প্রথম দিকে কিছুটা দেখে শুনে খেললেও কিছুটা সময় উইকেটে থিতু হয়েই লাসিথ মালিঙ্গা, নুয়ান প্রদীপদের উপর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় ব্যাট করতে থাকেন ওয়ার্নার-ফিঞ্চ জুটি।
ওয়ার্নার-ফিঞ্চ জুটির পতন ঘটে ১০.৫ ওভারে। এই জুটি ভাঙ্গে অনবদ্য ১২২ রান করার পর। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ১৭৭.৭৮ স্ট্রাইক রেটে ৩টি ওভার বাউন্ডারি এবং ৮টি বাউন্ডারিতে ৩৬ বলে করেন ৬৪ রান।ফিঞ্চ ক্যাচ আউট হন লাক্সান সান্ডাকানের বলে।
এরপর উইকেটে আসেন আরেক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
এরপর ম্যাক্সওয়েল-ওয়ার্নার জুটি একের পর বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি মেরে ছড়ি ঘুরাতে থাকেন প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর।আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে দ্রুততার দিক থেকে ২২ বলে ফিফটি করে যৌথভাবে এগারোতম স্থানটি নিজের করে নেন ম্যাক্সওয়েল।ম্যাক্সওয়েল ২২১.৪৩ স্ট্রাইক রেটে ৩টি ওভার বাউন্ডারি এবং ৭টি বাউন্ডারিতে মাত্র ২৮ বলে করেন ৬২ রান।
ম্যাক্সওয়েল-ওয়ার্নার জুটির পতন ঘটান ডাসুন সানাকা।এই জুটি ভাঙ্গে ২২৯ রানে ১৯.৩ ওভারে। এরপর আসেন অ্যাস্টন টার্নার। টার্নার এক বলে এক রান করে ১০০ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত থাকেন।
অপরপ্রান্তে থাকা ওয়ার্নার নিজের জন্মদিনে দিনটি একেবারেই নিজের করে নিলেন।ওয়ার্নার ১৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৫৬ বলে ৩টি ওভার বাউন্ডারি এবং ১০টি বাউন্ডারিতে করেন অপরাজিত ১০০ রান।অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং অ্যারন ফিঞ্চের পর মাত্র ৪র্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরানের এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।জন্মদিনের এই দিনটি নিজের মত করেই রাঙ্গালেন ৩৩ বছরে পা দেয়া এ অজি ব্যাটসম্যান।
অজিরা নির্দিষ্ট ২০ ওভারে মাত্র ২টি উইকেট হারিয়ে করেন ২৩৩ রান।
টি-টুয়েন্টিতে ২৩৩ রানকে বলা যায় পাহাড়সম রান। এই পাহাড়সম ২৩৩ রান তাড়া করতে নামেন শ্রীলংকার দুই ওপেনার ধানুস্কা গুনাতিলাকা এবং কুসাল মেন্ডিস। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মতই অস্ট্রেলিয়ান বোলাররাও রীতিমত ছড়ি ঘুরালেন শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানদের উপর।এদিন অজি বোলাররা ১ম ওভার থেকেই লংকান ব্যাটসম্যানদের খাবি খাওয়াতে থাকে।১ম ওভারের ৫ম বলেই কুসাল মেন্ডিসকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরালেন মিচেল স্টার্ক।
কুসাল মেন্ডিস পাহাড়সম রানের পুরো চাপটাই বুঝি নিজের কাঁধে নিলেন।এই মহাচাপে পড়ে গিয়েই মাত্র ৩টি বল খেলে শূন্য রানে আউট হলেন।এরপর উইকেটে আসেন বানুকা রাজাপাকশে।লংকানদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে ১৩ রানে যথাক্রমে ৩.৩ ওভারে এবং ৩.৪ ওভারে।ব্যাক্তিগত ১১ রান করে ১৩ বলে ৮৪.৬২ স্ট্রাইক রেটে ২টি বাউন্ডারি করে প্যাট কামিন্সের বলে ক্যাচ আউট হয় ধানুস্কা গুনাতিলাকা।
অবশ্য প্যাট কামিন্সের বলে আউট হওয়ার আগে ব্যাক্তিগত ২রানে কেইন রিসার্ডসনের বলে মিড অফের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে অ্যাস্টন অ্যাগারের ক্যাচ মিসের ফলে একবার জীবন পান ধানুস্কা গুনাতিলাকা।
এরপরের বলেই অজি ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স নিজের দ্বিতীয় শিকারে বানুকা রাজাপাকশেকে মিডল স্টাম্পে ক্লিন বোল্ড করেন।প্যাট কামিন্স টানা দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন।বানুকা রাজাপাকশে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৬ বলে মাত্র ২ রান করে।
এরপর উইকেটে আসেন কুসাল পেরেরা এবং ওসাডা ফার্নান্দো।পেরেরা এবং ফার্নান্দো থিতু হওয়ার চেষ্টা করলেও ৩৩ রানের পার্টনারশিপ করার পর এই দুইজনের জুটি ভাঙ্গে দলীয় ৪৬ রানে ৯.২ ওভারে।ওসাডা ফার্নান্দো ব্যাক্তিগত ১৩ রানে ২১ বলে ১টি বাউন্ডারিতে ৬১.৯০ স্ট্রাইক রেটে অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে বোল্ড হয়ে যায় দলীয় ৪৬ রানে ।
এরপর উইকেটে আসেন ডাসুন সানাকা। কুসাল পেরেরা আউট হন দলীয় ৫০ রানে।পেরেরা মিচেল স্টার্ক এর দুর্দান্ত এক ইয়র্কার ডেলিভারিতে। ব্যাক্তিগতভাবে পেরেরা ১৬ রান করেন ১৬ বলে ১টি বাউন্ডারিতে ১০০ স্ট্রাইক রেটে।
কুসাল পেরেরা এবং ওসাডা ফার্নান্দো জুটির পতনের পর উইকেটে আসেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।হাসারাঙ্গা এবং সানাকা দুজন মিলে করেন ২১ রানের জুটি।১৩.৬ ওভারে হাসারাঙ্গা দলীয় ৭১ রানে রান আউটে কাঁটা পড়েন ম্যাক্সওয়েলের বুদ্ধিদীপ্ত থ্রো এর ফলে।
রান আউটে কাঁটা পড়ার আগে হাসারাঙ্গা ১০ বল খেলে ৫ রান করেন ৫০ স্ট্রাইক রেটে।
হাসারাঙ্গা আউট হওয়ার পর ৮ম ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন লাক্সান সানডাকান।ব্যাটসম্যান হিসেবে আসলেও সানডাকান আগাগোড়া একজন বোলার।৭১ রানে ইতোমধ্যেই নেই ছয় উইকেট।দলের অবস্থা যখন এই তারই বা কি করার আছে এই মুহুর্তে।এসেই দেখলেন ওপর প্রান্তের আরেক ব্যাটসম্যান ডাসুন সানাকা আউট হয়ে গেছেন।সানাকা অজি লেগস্পিন বোলার এ্যাডাম জাম্পার বলে লিডিং এইজ হয়ে কেইন রিচার্ডসনের হাতে ধরা পড়েন।
ডাসুন সানাকা লিডিং এইজ হয়ে আউট হওয়ার আগে ৯৪.৪৪ স্ট্রাইক রেটে ১টি ওভার বাউন্ডারি এবং ১টি বাউন্ডারিতে ১৮ বলে করেন ১৭ রান।
এরপরই উইকেটে আসেন লংকান দলপতি লাসিথ মালিঙ্গা। মালিঙ্গা-সান্ডাকান জুটি করেন মাত্র ১১ রানের জুটি।লাক্সান সান্ডাকান এ্যাডাম জাম্পাকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে অফসাইডে এ্যাস্টন অ্যাগারের হাতে ধরা পড়েন। সান্ডাকান ৮৫.৭১ স্ট্রাইক রেটে ৭ বলে ১টি বাউন্ডারিতে করেন ৬রান।
এরপর ১০ম ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন কসুন রাজিথা। রাজিথা দুটি বল খেলে ডাক মারেন অর্থাৎ, কাসুন রাজিথা কোন রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
এরপর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন নুয়ান প্রদীপ।প্রদীপ এবং মালিঙ্গা শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন।
মালিঙ্গা ১টি বাউন্ডারিতে ৬৮.৪২ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৯ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।নুয়ান প্রদীপ ১টি বাউন্ডারিতে ১৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৬ বল খেলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।প্রদীপ এবং মালিঙ্গা ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেও দলকে জিতাতে পারনি।
নির্দিষ্ট ২০ ওভার শেষে লংকানরা শেষ পর্যন্ত করে ৯৯ রান ৯টি উইকেট হারিয়ে।তাই অজিরা ১৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।
৩ ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজের ১ম ম্যাচ জিতে লংকানদের বিপক্ষে (১-০) এগিয়ে গিয়েছে অজিরা। প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।
প্রতিবেদন : ইমতিয়াজ আহমেদ,