প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের পরিচালক আকবর হোসাইন জানান, “তহবিল সংগ্রহ এবং ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সরকার এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী এটি দরিদ্র
মানুষদের স্বাবলম্বী করেতুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”
তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে ৬৭ হাজার ৭ শত ৫৭টিগ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছে। যা থেকে ৩২ লাখ ৭০ হাজারপরিবার উপকৃত হচ্ছে। প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১ হাজার ২ শত ২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকারও বেশি গচ্ছিত রেখেছে এবং সরকার ১ হাজার ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে।
প্রকল্পের আবর্তিতমান তহবিল ১ হাজার ৫ শত ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং এর উপার্জনক্ষম প্রকল্পের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮ হাজারেরও বেশি । এসব উপার্জনক্ষম প্রকল্পে ৪ হাজার ৭ শত ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
আকবর হোসাইন বলেন,‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে মূলধন গঠনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে, যা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদেরকে একসাথে উঠান বৈঠকে বসতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়োজন মাফিক ছোট পারিবারিক খামার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করছে।’
প্রকল্প পরিচালক বলেন,‘গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’র সদস্যরা ইতোমধ্যে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এখন তারা নিজেদের ব্যবসা নিজেরাই স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। এ প্রকল্প পরিচালনার ফলে প্রকল্পভুক্ত এলাকাগুলোতে নিম্ন আয়ের পরিবারের হার ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাবলম্বী পরিবারের হারও ২৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ শতাংশ হয়েছে।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড.দেওয়ান এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প সারা দেশে গ্রামীণ জনগণকে ক্ষমতায়িত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, গাজীপুর জেলায় ৪ শত ৩১ টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছে। যেখান থেকে ২১ হাজার ৮ শত ৬৮ টি পরিবার সুবিধা গ্রহণ করছে। এ সুবিধাভোগীরা ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছে।’
তিনি আরো জানান, এসব সমিতির মাধ্যমে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে সমিতির সদস্যদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে এবং এ ঋণ পুনরুদ্ধারের হার ৬৫ শতাংশ।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন জানান, তার উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে মোট ২০৩ টি সমিতি গঠিত হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬ হাজার ৯ শত ৫৮ টি পরিবার সুবিধা পাচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নীলফামারী জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা রুপালি বেগম গত দুই বছর ধর একটি হাঁস উৎপাদন খামার পরিচালনা করছেন।
রুপালি বেগম বলেন,“এ অল্প সময়ের মধ্যেই আমি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছি। এখন আমি আমার উৎপাদিত হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে পরিবারকে সাহায্য করতে পারি”। রুপালি বেগমের কাছে এ গ্রাম উন্নয়ন সমিতি একটি ৬০ সদস্যের পরিবার ‘
তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমিতির সব সদস্যদের মধ্যে বন্ধন আরো দৃঢ় হয়েছে। একই পরিবারের সদস্যদের মতো একের প্রতি অন্যের সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আবর্তিতমান তহবিল অনুযায়ী সমিতির প্রত্যেক সদস্য মাসে ২শ’ টাকা সঞ্চয় করে এবং সরকার সমপরিমাণ টাকা তাদের বোনাস হিসেবে দেয়। এসব টাকা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।’
সংশ্লিষ্ট গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থেকে তহবিল পাওয়ার পর, প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারের একজন পুরুষ বা নারী সদস্য মাছ চাষ, পশু পালন, হাঁসমুরগী পালন, নার্সারী তৈরী এবং সবজি চাষের মতো ছোট ছোট খামার গড়ে তোলেন।
ফলে নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রতি ইঞ্চি জমি কৃষি-জাত পণ্য উৎপাদনে যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। খামারগুলো থেকে আয় করার পর,গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’র সদস্যরা সমিতির ব্যাংক হিসাবে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করে। এভাবেই প্রকল্পের তহবিল আবর্তিত হতে থাকে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে স্থায়ীভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
প্রকল্প পরিচালক আকবর হোসাইন বলেন,‘এভাবেই এ প্রকল্পটি একটি টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন চক্র হিসেবে কাজ করছে।’(বাসস )
প্রতিবেদন: একেএম কামালউদ্দিন চৌধুরী,অনুবাদ : সৈয়দ এলতেফাত হোসাইন ১৮ অক্টোবর ২০১৯