ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্য আমাজনের জঙ্গল। পৃথিবীর ২০% অক্সিজেন সরবরাহ করে এটি। তাই দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এ গভীর রেইন ফরেস্টকে পৃথিবীর ফুসফুসও বলা হয়। কয়েকদিন ধরে নিঃশব্দে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এ ফুসফুস। আট মাসে ৭২ হাজার বারেরও বেশি আগুন লেগেছে ।
এ অরণ্যের নানা প্রান্তে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাজনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এতে গোটা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনেও প্রবল প্রভাব পড়তে পারে।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই এ বিপুল সংখ্যায় দাবানলে আক্রান্ত হচ্ছে আমাজনের জঙ্গল।
ইনপে জানায়, আমাজনের জঙ্গলে যে দাবানল হতো না তা নয়। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরে ৮৩ % বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
ইনপে-র এ তথ্য সামনে আসার পরে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জার বোলসোনারোর নির্দেশে বরখাস্ত করা হয়েছে ইনপে-র শীর্ষ কর্মকর্তা রিকার্ডো গ্যালভাওকে। অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি ওই সংস্থার মাধ্যমে ভুল তথ্য রটাচ্ছেন।
এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই সামনে এসেছে আরেক তথ্য। সম্প্রতি ক্ষমতায় আসার পরে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তহবিলে বরাদ্দ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন বোলসোনারো। মনে করা হচ্ছে,সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে আমাজনের জঙ্গলে ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে ক্ষুব্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
ইনপের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বোলসোনারো জানান,যা ঘটছে তার সবকিছুই এনজিও-র লোকদের আমাজানে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আসার দিকে ইঙ্গিত করছে।
তবে কারণ যা-ই হোক,একটা বড় এলাকা জুড়ে এ ভয়াবহ আগুন ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতির, কয়েক হাজার কোটি সংখ্যক গাছ রয়েছে এ বিশাল বনভূমিতে। এ বনভূমির ৬০% ব্রাজিলে অবস্থিত। আমাজনের জঙ্গলের আগুন থেকে উৎপন্ন ঘন ধোঁয়ার কারণে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে দিনের বেলাতেই অন্ধকার নেমে এসেছে প্রায়।
পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন,আমাজন জঙ্গল সংলগ্ন আমাজোনাস ও রোনডোনিয়া রাজ্যের বনাঞ্চলে লাগা আগুনের ধোঁয়া ২ হাজার ৭ শ কি.মি’রও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সাও পাওলোতে এসে পৌঁছেছে। এ সপ্তাহের প্রত্যেক দিন দুপুর ৩ টার পর থেকে ঘণ্টাখানেকের জন্য শহরটি অন্ধকারে ডুবে ছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজনে বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা রয়েছে। এ জঙ্গলই বিশ্ব উষ্ণায়নের গতি খানিকটা ধীর রেখেছে। এ অরণ্যের ওপরে রাষ্ট্রের লোভও নতুন নয়। ফলে এটা কোনোও ষড়যন্ত্র হতেই পারে। যদিও এখনও কোনোও পক্ষের বিরুদ্ধেই কোনোও প্রমাণ মেলেনি।
ইমপে’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৫ শ’ কি.মি বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৬৫ % বেশি। ২০১৯ সালে আপাতত যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা থেকে মনে করা হচ্ছে যে, আমাজন বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার এ হার ৩ গুণ বেড়ে গেছে। শুধু গত মাসেই ২ হাজার ২ শ’ কি.মি.বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। যা গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২৮০ % হারে বেশি।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা-ও আমাজন অঞ্চলের দাবানলের বেশ কয়েকটি উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে। তবে এসব তর্কের ঊর্ধ্বে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,এবনভূমিকে রক্ষা করা।
যেভাবে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আমাজন,তাতে খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীর জলবায়ুর কাঠামো বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
সূত্র : দ্য ওয়াল
বার্তা কক্ষ
২২ আগস্ট ২০১৯
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur