চোখের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন লন্ডনে অবস্থান করছিলেন, সে সময় একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বিএসটিআইয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে।
এর জেরে তখন সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা; একপর্যায়ে আদালতে রিট হয়। লন্ডন থেকে ফিরে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ওই গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশের পর বাজারচলতি দুধ ব্যবহার করা যাবে কী যাবে না দেশবাসীর মনে যখন এ প্রশ্ন জেগেছিল, তখন সরকারের মন্ত্রীরা কেন নীরব ছিলেন?
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ বিষয়ে মন্ত্রীদের একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য আমাদের সময়কে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, এ গবেষণাটি করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক। তিনি গবেষণা-উত্তর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, বিএসটিআই নিবন্ধিত পাস্তুরিত দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা জানান, গতকালের বৈঠকে ওই গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কথা নেই বার্তা নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করলেন। তিনি যে গবেষণা করেছেন, সেটা কোন প্রক্রিয়ায় করেছেন? গবেষণার যথাযথ অনুমতি নিয়েছেন কিনা? গবেষণার ফল কোন জার্নালে প্রকাশ হয়েছে? এসব প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বৈঠকে আরও বলেন, আমি লন্ডনে বসে লক্ষ করলাম, কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ একজন দুধ পরীক্ষা করে বলে দিলেন যে, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়। সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিয়ে আদালতে রিট করা হয়। এ সময় তিনি যোগ করেন, আজ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মানুষ যদি সবই ভেজাল খায়, তা হলে গড় আয়ু বাড়ে কীভাবে? আগে মানুষ কয় বছর বাঁচত? এখন ৭০-৭৫ বছর অনায়াসেই আয়ু পাচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, কিছু কিছু দুর্ঘটনার হার কমানো গেলে গড় আয়ু আরও বাড়ত।
মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, আলোচনার এক পর্যায়ে মন্ত্রীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, দুধ নিয়ে যখন সারাদেশে তোলপাড়; পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি; টিভিতে টকশো হচ্ছিল; তখন আপনারা কী করছিলেন? কারো মুখে তো এ বিষয়ে কোনো কথা আমি দেখিনি। এ সময় মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের থামিয়ে দেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মাসখানেক পর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এ বৈঠকে প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।
বার্তা কক্ষ, ২০ আগস্ট ২০১৯