সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ১৯২০ সালের ২৬ মার্চ বর্তমান মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আলী হামেদ ছিলেন একজন স্কুল ইন্সপেক্টর ।
মা সৈয়দা কামরুন্নেগার খাতুন ছিলেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামের জমিদার ও পীর সৈয়দ মোকাররম আলীর মেয়ে। ছাত্রজীবনেই তিনি আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত পত্রিকায় গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা প্রকাশ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সৈয়দ আলী আহসান সক্রিয়ভাবে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । এ সময় তিনি বাংলা পুথিসাহিত্য ও মুসলিম ঐতিহ্যের সমন্বয়ে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং কলা অনুষদের ডিন নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ভারতে চলে যান এবং কলকাতায় অবস্থান করে যুদ্ধের পুরো ৯ মাস স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। তিনি লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে স্থানীয় এবং বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭২ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের বাংলা ভাষ্য চূড়ান্তকরণ, জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদ করা, শিল্পকলা একাডেমির গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, বাংলা একাডেমি ও বাংলা ডেভেলপমেন্ট বোর্ড একত্রীকরণের মতো অনেক জাতীয় কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন।
১৯৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। ১৯৭৭ সালে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ১৯৮৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
অধ্যাপক আহসান ১৯৬৭ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’,১৯৮৩ সালে‘একুশে পদক’এবং ১৯৮৭ সালে‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন।
সৈয়দ আলী আহসানের রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘নজরুল ইসলাম’, ‘ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রবীন্দ্রনাথ : কাব্যবিচারের ভূমিকা’, ‘জার্মান সাহিত্য’, ‘মধুসূদন : কাব্য কবি ও কাব্যাদর্শ, ‘কথাবিচিত : বিশ্বসাহিত্য’, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীনযুগ’, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস মধ্যযুগ’ ও ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত : আধুনিককাল’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০০২ সালের ২৫ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বার্তা কক্ষ
২৫ জুলাই ২০২৯