জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯ এ চাঁদপুর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ভালো ফলাফল অর্জনকারী শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
গত বুধবার (২৭ মার্চ) জেলা শিক্ষা সপ্তাহের সমাপনিতে শিক্ষা অফিসের তত্ত্ববধানে এ প্রতিষ্ঠানকে ৮ উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়।
প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়, তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জেলা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়।
এর আগে শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলা ভিত্তিক চাঁদপুর সদর থেকে হাসান আলী সরকারি উবি, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উবি ও বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় অংশ নেয়। এর মধ্যে হাসান আলী উবি সদরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়।
যেসব বিষয়গুলোতে সাফল্য থাকলে একটি প্রতিষ্ঠানকে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়, সেসব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক আব্দুল আজিজ শিশির চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষকদের যোগ্যতা ও শিখানোর পদ্ধতি, খেলা ধুলায় নৈপুন্য, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সহপাঠ্যক্রম কার্যক্রমে অংশগ্রহন ও নৈপুন্য, বি এন সি সি, স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট সদস্যদের কার্যক্রম, যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় দিবস পালন ইত্যাদি কার্যক্রমে ভালো অবস্থান থাকলেই একটি প্রতিষ্ঠানকে জেলা শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এর বাইরেও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান ও ই-লার্নিং পদ্ধতির শিক্ষাদানের বিষয়কেও মূল্যায়ন করা হয়। আর জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান আবার বিভাগীয় কার্যক্রমে অংশ নেয়। সেখানেও একই বিষয়ের ওপর প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।
জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়া হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমি চাই জেলার সবগুলো বিদ্যালয় এভাবে এগিয়ে আসুক। একজনের দেখাদেখি যদিও অন্যরাও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের দিকে নজর তাহলেই এ প্রতিযোগিতার সার্থকতা পাবে। শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্যে আমি আমার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর আন্তরিকতায় এগিয়ে যায় একটি প্রতিষ্ঠান।’
এদিকে বিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে উইকিপিডিয়া বলছে, চাঁদপুরের প্রখ্যাত জমিদার ও লোকহিতৈষী হাসান আলী কর্তৃক ১৮৮৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যিনি পাশের লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে এসেছিলেন। এই স্কুলটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন রাণী ভিক্টোরিয়ার সিলভার জুবিলি (রজতজয়ন্তী) ঘটেছিল, তাই স্কুলটির নাম চাঁদপুর হাসান আলী জুবিলি হাই স্কুল রাখা হয়েছিলো। কিন্তু এখন চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত।
অতীতে, বালক এবং বালিকা উভয়কেই শিক্ষা দেওয়া হতো। কিন্তু দিনে দিনে ছাত্র সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং শহরেই আলাদা বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শুধু ছাতদের পড়নো হয়। পহেলা মে ১৯৬৯ সালে এটি সরকারিকরণ হয়।
হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিস্তারিত ইতিহাস সম্পর্কে এম. আবদুল হামিদ মজুমদার তাঁর বইতে লিখেছেন, যিনি ১৯৪৯-১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। স্কুলটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ১২৫ বছরের বার্ষিকী উদযাপন করেছিল।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি ৩৪ বছর পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের কালী বাড়ির কাছে অবস্থিত ছিল। ১৯১৯ সালে এটিকে বর্তমান স্থানে (চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের পাশে সরকারি মহিলা কলেজের বিপরীতে) আনা হয়। সেই পর্যায়ে স্কুলটি দুই তলা বিশিষ্ট লাল ইটের ভবন ছিল। বর্তমানের তিনতলা হলুদ ভবনটি প্রায় ২০ বছরের পুরোনো।
প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
৩১ মার্চ, ২০১৯