শিল্পপতি আর প্রবাসী অঞ্জল ফরিদগঞ্জে প্রতিদিন বিদ্যুতের লোডশেডিং গ্রাহকদের অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। সুষ্ঠ ব্যবস্থপনা আর বিদ্যুৎ লাইনে ধারণ ক্ষমতার অভাবে প্রতিদিন গড়ে ৬-৮ বিদ্যুৎ থাকছে না।
গ্রাহকদের মতে দিনে রাতে কতবার বিদ্যুৎ আসে আর যায় তার হিসাব রাখা কঠিন। এ নিয়ে জনমতে অসন্তোষ আর অতিষ্ঠতা বিরাজ করছে।
আকাশে মেঘ উঠেছে থাকবে না বিদ্যুৎ, আকাশে প্রখর রোদ থাকবে না বিদ্যুৎ, ঝড়ো হাওয়া হলে তো সময়ের বালাই নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলায় ১ লাখ ৪১ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ১১টি ফিডারে বিভক্ত করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সরবরাহ হচ্ছে।
বিদ্যুতের চাহিদা ২৫/২৮ মেগাওয়ট। চাহিদার সমপরিমান বিদ্যুৎ লাইন ধারণ ক্ষমতার অভাবে সঞ্চালন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ লোডশেডিং এ ত্রাহি অবস্থা।
পুরো উপজেলায় অন্তত অর্ধশত বাজার রয়েছে। লোডশেডিংয়ে এসব বাজারের ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের অনেকেই মেশিন-পত্র চালাচ্ছেন, আবার অনেক দোকানির রেফ্রিজারেটরে থাকা মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে পল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই জানান, আমাদের ফার্মগুলোতে তীব্র গরমে মুরগিগুলো মরার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া সেলসের জন্য রাখা দোকানগুলোতে মুরগী মরে যাচ্ছে গরমে।
উপজেলার অঞ্চল ভেদে লোডশেডিং কমবেশি হচ্ছে। তবে ৫নং ফিডারে সব চেয়ে বেশি লোড শেডিং দেওয়া হচ্ছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ।
এদিকে নতুন লাইন সংযোগে বাড়তি টাকার সুবিধা নিয়ে দালালচক্র নিয়ম বর্হিভূত নির্ধারিত দূরত্বের বাহিরেও পিলার বসানোর অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সংযোগ দিয়ে সুবিধা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে দালালচক্র আর অফিসের অসাধু কর্মকর্তা /কর্মচারী ।
দাললচক্র ছাড়া বিদ্যুৎ অফিস ও গ্রহকরা অসহায় । না গ্রাহক না অফিস কেউই দালাল ছাড়া কোন কাজ করতে নারাজ। আর করবেই বা কিভাবে, গ্রাহক নিজে কোন ফাইল অফিসে নিয়ে গেলে ওঁই সকল ফাইল দালালরা অফিস থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ চাউর রয়েছে।
পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের চরগুদাড়ায় চলমান একটি লাইন নির্মানে পৌর সভার সাবেক জনপ্রতিনিধি মোঃ শফিকুরর হমানের নির্দেশে শরীফ নামের দালাল প্রথমে ৩ হাজার টাকা মিটার পিছু ও পরে সাড়ে ৩ হাজার টাকা হারে ১৯টি মিটার হতে ১লাখ ২৩ হাজার ৫শত টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তারা শ্রমিকদের খাবারের নাম করে আরো ৩শ’ টাকা মিটার পিছু হাতিয়ে নিয়েছে। এই লাইনটি রমজানে সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দালাল ও ঠিকাদার।
এলাকা পরিচালক -৩ ও সভাপতি সমিতি বোডর্ চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মোঃ আলিম আযম রেজা জানান, ২০ কিলোমিটার ৩৩ কেভি মেইন লাইন নির্মান সম্পন্ন হয়ে চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর রিভার ক্রসিং এ সাব মেরিন ক্যাবল বসানোর কাজের ঠিকাদার কাজ করতে এসে পিডিবির বাধার কারণে লাইন চালু করা যাচ্ছে না। ফলে ফরিদগঞ্জে লোডশেডিং হচ্ছে।
উপজেলার কামতা সাব ষ্টেশনের এজিএম মোঃ রফিকুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমার এ অঞ্চলে ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছে । রামগঞ্জ গ্রীড হতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয। এখানে বিদ্যুতের প্রয়োজন ৮ মেঘাওয়াট ও প্রাপ্তি ৮ মেঘাওয়াট। এখানে ৬ টি ফিডারের মধ্যে ৪টি চালু রয়েছে আর ১টি ফিডারের কাজ চলছে কাজ শেষ হলে আর লোড শেডিং থাকবে না।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, এ এলাকায় ২৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও লাইন ক্যাপাসিটির অভাবে প্রতিদিন ৮ ঘোওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতিতে রয়েছে। চাঁদপুর গ্রীড থেকে ১৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৪ মেঘাওয়াট চাঁদপুর সদরের বালিয়ায় এবং বাকী ১৪ মেঘাওয়াট ফরিদগঞ্জে সরবরাহ করা হয়।
এদিকে রায়পুর হতে পূর্বে সাড়ে ৯ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে ৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, লাইন ক্যাপাসিটির অভাবে চাহিদানুপাতে বিদ্যুৎ নিতে পারছিনা। তাই কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রস্তাবিত ৪টি উপ-কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উপ-কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- গৃৃদকালিন্দিয়া, কবিরূপসা, উপাদিক, সন্তোষপুর। এগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে নিরব্বচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে বশে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে হাইমচরে ১০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাব ষ্টেশন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও কামতা হতে বাগাদি চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিঃমিঃ ৩৩ কেভি লাইন নির্মাণ টার্ণকি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শেষ প্রান্তে।
নির্মানাধীন ফিডারের কাজ শেষ ও লাইিন ক্যাপাসিটির মাত্রা বৃদ্ধিসহ কিছু সমস্যা নিরসন হলে আশা করাযায় অল্প সময়ের মধ্যেই লোডশেডিং আর থাকবেনা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুত অফিসের জিএম মোঃ আবু তাহের চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘লোড শেডিং অতিমাত্রায় হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে আমি ডিজিএম ফরিদগঞ্জকে পদক্ষেপ নিতে বলবো। দালালগুলোকে ধরে আমাদের খবর দিন। লাইন সংযোগে কোন টাকা পয়সা লাগে না। কাউকে টাকা দিবেন না। যে কোন সময় আমাকে অনিয়ম হলে জানাবেন আমি ব্যবস্থা নেবো।’