চট্রগ্রামের রাউজানের গ্রামে নতুন আদলে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বিদেশি মসজিদ। উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ গর্জনীয়া এলাকায় এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশাল আকারে মফস্বল এলাকায় এ মসজিদটি চোখে পড়ার মত। রাউজান সদর থেকে প্রায় ৮ কি.মি উত্তরে হলদিয়া ভিলেজ সড়কের পাশে গর্জনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জায়গায় মসজিদটি নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে,ঐ স্থানের প্রাচীনতম নড়েবড়ে মসজিদটি ভেঙ্গে বিদেশি আদলে করার প্রথম উদ্যোগটি নেন দুবাই প্রবাসী স্থানিয় গর্জনিয়া নিবাসী মরহুম হাজী ইদ্রিস মিয়া মিস্ত্রির মেজ ছেলে আলহাজ্ব মাও.ওসমান তালুকদার। ৬০ ফুট দৈর্ঘ ও ৫০ ফুট প্রস্তের বিশাল মসজিদটিতে একসাথে ৬‘শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসজিদের ভিতরে মারবেল পাথর দিয়ে টাইলস,অর্ধ-শতাধিক বৈদ্যুতিক পাখা,আধুনিক প্রযুক্তির আলোক বাতি,শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দরজা জানালা, বিশাল গম্বুজ,প ৫০ ফুট উচ্চতার মিনার তৈরি করা হয়েছে। চলতি মাহে রমজান শুরুর কয়েকদিন আগে মসজিদের মুসল্লিদের নামাজের জন্য মসজিদটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ২০১৭ সালে ডিসম্বরের প্রথম সপ্তাহে মসজিদটি বিদেশি আদলে নির্মাণ করার মানসে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
সূত্র জানান,আবুধাবী প্রবাসী আলহাজ্ব মাও.ওসমান তালুকদার মসজিদটি নতুন আদলে নির্মাণে উদ্যোগ নেয়ার জন্য এলাকাবাীর সাথে মতবিনিময় করেন বেশ কয়েকবার। এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে একটি নির্মাণ কমিটি করে দেয়া হয়। পরে ওসমান তালুকদার দুবাইতে রাউজান এলাকায় একটি মসজিদের বেশি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রবাসী আলহাজ্ব মুনির চৌধুরীর সাথে আলাপ আলোচনা করেন ।
মুনির চৌধুরী এতে মসজিদ করার পক্ষে মতামত দেন। ওসমান তালুকদার,মাও.আলী রেজা সহ আরো বেশ ক’জন প্রবাসী মিলে মুনির চৌধুরীর সাথে বৈঠক করে দিনক্ষণ ঠিক করে দেশে এসে মসজিদটির জায়গা পরিদর্শন করেন। এরপর তারা বিদেশি আদলে তৈরি করেন বেশ কয়েকটি আধুনিক নকশা। এলাকার মুসল্লিদের থেকে নেয়া হয় নকশার মতামত। এরপর পছন্দের নকশাটি দিয়ে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। মসজিদটি নির্মাণে আর্থিক সহোযোগিতার দারটি উম্মুক্ত রাখা হয় যাতে ছোট বড় গরীব সকলে সহযোগিতা করতে পারেন। শুর হয় প্রাচীনতম এ মসজিদটির নতুন শৈলিতে কাজ।
উত্তর চট্টগ্রামের পীরে কামেল,রাউজান হলদিয়া গর্জনীয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহসূফি আলহাজ্ব সৈয়দ আবদুল গফুর মাষ্টার শাহ (রহ 🙂 স্মৃতি বিজরিত এ মসজিদটিতে তিনি নিজেই ইমামতি করেছেন দীর্ঘকাল। এ মসজিদটি নিয়ে হুজুরের জবানে পাকের বহু কেরামত, বহু ইতিহাস বিরজমান। হারিকেন নিয়ে ইমামতি করা এ বুজুূর্গ ব্যাক্তি বলতেন এ মসজিদে অলিয়ে কেরামগণ নামাজ পড়তে আসতেন রাতের বেলায়।
এক কথায় এটি একটি বুজুর্গো মসজিদও বটে। বর্তমান হুজুরের সুযোগ্য উত্তরসুরি গর্জনীয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক সফল প্রিন্সিপাল আলহাজ্ব আল্লামা শাহজাদা সৈয়দ আহছান হাবিব এ মসজিদে খতিবের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে মানুষকে হেদায়েত প্রদান করছেন।
এ মসজিদটি নির্মাণে যার বেশি অবদান রাউজান উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান একে এম এহেছানুল হায়দার বাবুলের ছোট ভাই প্রবাসী আলহাজ্ব একে এম মুনির চৌধুরীর। মুনির চৌধুরী,মাও.ওসমান তালুকদার,মাও.আলী রেজাসহ অনেকে মসজিদটি নির্মাণে প্রবাস থেকে আর্থিক যোগান দিয়েছেন। তাদের এ আর্থিক অনুদান না হলে বিশাল একটি মসজিদ এখানে নির্মাণ করা আদৌ হত না।
স্থানীয় মুসল্লিদের মতে, বিশাল এ মসজিদটি রক্ষণা-বেক্ষণসহ প্রতিনিয়ত পরিস্কার-রিচ্ছন্ন রাখতে কমপক্ষে দু’জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিদিন মসজিদ পরিস্কার পরিচ্চন্ন করা না-হলে মসজিদের সৌন্দর্য-বর্ধন কমে যাবে। মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন,‘সমগ্র রাউজান এলাকায় এ ধরনর আধুনিক পদ্ধতি ও বিদেশি আদলে মসজিদ নির্মাণ হয়নি। তবে কথা হচ্ছে মসজিদের খোরাক হচ্ছে মুসল্লি ‘
এদিকে একতালা বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণে অর্ধ-শতাধিক রাজমিস্ত্রি রাত-দিন কাজ করেছেন দীর্ঘ দেড় বছর। তাদের কাজ তদারকি করেছেন ব্যাংকার মকসদুল করিম ও একজন ইঞ্জিনিয়ার। সব মিলিয়ে নতুন মসজিদের ভেতরে ডুকে নামাজ আদায় করলে মুসল্লিদের মনে প্রশান্তি আসবে।
বার্তা কক্ষ
১ জুন ২০১৯