রাতে রমজানের চাঁদের আলো ঝিলমিল করছে আর এ আলোতেই একদল যুবকের হই-হই চিৎকার ভেসে আসছে। দূর থেকে মনে হবে কেউ জোরপূর্বক কারো জায়গা দখল করে নিচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখা গেলো উল্টো চিত্র।
রমজানের এ রাতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে একদল যুবক রোজার ক্লান্তি উপেক্ষা করে জনস্বার্থে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে। তারাবির নামাজের পর থেকে সাহরি খাওয়ার আগমূহূর্ত পর্যন্ত পর্যন্ত চলে এই রাস্তা নির্মাণের কাজ।
ঘটনাটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা পশ্চিম বড়ালী গ্রামের। শুক্রবার (১৯ মে) রাতে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের মন্তি খাঁর বাড়ির সামনে থেকে একই গ্রামের হাওলদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণের জন্য কাজ করছে অন্তত অর্ধশত যুবক।
কাজ করা এই যুবকদের মধ্যেই আবার যুক্ত হচ্ছে শিশু থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী পুরুষ। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে রাস্তাটি নির্মাণ করতে যার যার অবস্থান থেকে কোদাল নিয়ে নেমে পড়েG কিছুক্ষণ পরপর চলে চা বিরতি। মাটি কেটে যুবকদের হাতেই হাতেই চলে আসছে ৭ ফুট চওড়া রাস্তার উপর। প্রতিদিনই তারাবির নামাজ শেষে দল বল নিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য যুবকরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। মাটি কাটার কাজ চলে সেহরী খাওয়ার আগমূহুর্ত পর্যন্ত।
গ্রামবাসীরা জানায়, ৭ ফুট চওড়া ও এক কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি নির্মাণের মধ্যে দিয়ে ভুক্তভোগীর্দেপ্রায় ৫০ বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় এ এলাকার কোন নারী পুরুষকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে হলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এই দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দীর্ঘ বছর থেকেই এই রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যেগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে রাস্তাটি নির্মানের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এক পর্যায়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুল হকের সহযোগিতায় ওই গ্রামেরই একদল যুবক তাদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য এবারের রমজানের সময়টাকেই বেছে নেয়।
গত ৬ দিন আগে শুরু হওয়া ওই রাস্তার প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ । বাকি কাজও আগামী ৫/৭ দিনের মধ্যেই শেষ করা হবে বলে স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা দাবি করেন
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, মূলত গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের স্বার্থে দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষা ছিল এ রাস্তা। অবশেষে স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে একদল যুবক রমজান মাসে তারাবির নামাজ শেষে সেহরীর আগমুহুর্ত পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে যেভাবে করে যাচ্ছে তা সমাজে এক অনুকরণীয় ও বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
সাবেক পৌর কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ বলেন, এই এলাকার লোকজনের চলাচলের সুবিধা ছাড়াও বিশেষ করে রোগীদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্যই মূলত এই রাস্তাটি নির্মাণের উদ্দেশ্য। প্রায় ১ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি নির্মাণের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে দেখে গ্রামবাসীও এখন উৎফুল্ল।
তবে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুল হকের সহযোগিতা ছাড়াও এই এলাকারই সন্তান আমাদেরই গর্ব ডাক্তার আসাদুজ্জান জুয়েলের উৎসাহ ও অনুপ্রেরনায় মূলত এই রাস্তাটি নির্মানের জন্য গ্রামেরই একদল যুবক কাজ করছে।
প্রতিবেদক : মানিক পাঠান ও শিমূল হাছান
১৯ মে ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur