রাস্তা নেই, তবুও নির্মিত হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৩ নং দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড কৃষ্ণপুর খালের উপর কৃষিজমির মাঝখানে।
এ বিষয়ে এলাকার শত-শত মানুষের পক্ষ থেকে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি ছোট খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হলে শত শত জেলেদের জেলে নৌকা আসা-যাওয়ার সময় সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে জেলেদের পক্ষ থেকেও আরোও একটি অভিযোগ উঠেছে।
হাইমচর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই ব্রিজটি নির্মাণ করতে সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নদীর পাড়ে কৃষিজমির মাঝে রাস্তা ছাড়া একটি ব্রিজ নির্মাণ করায় জনমনে ব্যাপক চাপা ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২নং উত্তর আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ দুলাল পাটোয়ারীর হাডু এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সের নামে ব্রিজটি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি করার জন্য দেওয়া হয়। পরে নয়ানি লক্ষীপুর গ্রামের মজিবুর রহমান পাটোয়ারী ও নুরুল হক মাস্টার যৌথভাবে সেই ব্রিজের কাজটি ঠিকাদারের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে তারা নিজেরাই কাজটি করছেন বলে ঠিকাদার জানান ।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ পাটওয়ারী, শহীদ মাঝি ও মফিজ মাতাব্বর জানান, জনবহুল রাস্তায় ব্রিজ না করে মেঘনা নদীর পাড়ে বিলের মাঝখানে ঠিকাদারের স্বার্থ হাসিল করতে ব্রিজটি করা হচ্ছে। ইউনিয়নের শত শত জেলে হাইমচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আনিসুর রহমানের কাছে অভিযোগ করে কাজটি না করার জন্য বাধাও দেয় ।
বাধা উপেক্ষা করে ঠিকাদার নিজের প্রভাব খাটিয়ে চলাচলের রাস্তায় ব্রিজটি না করে কৃষি জমির মাঝে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। ছোট একটি খালের উপর দিয়ে ব্রিজটি করলেও দুই পাশে কোন রাস্তা নেই, রয়েছে কৃষি জমি, পাশেই আছে ডাকাতিয়া নদী। এ এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ লোক মৎস্যজীবী। এ কৃষ্ণপুর খাল দিয়ে শত শত জেলে নৌকা আসা-যাওয়া করে থাকে।
স্থানীয় জেলেরা বলেন, ব্রিজটি যে উচ্চতায় করা হচ্ছে, বর্ষার সময় এখান দিয়ে কোন নৌকা চলাচল করতে পারবে না এবং চরম দুর্ভোগে পড়বে শত-শত জেলেরা। এ কারণে ব্রিজটি আরো দুই ফুট উচ্চতা করার জন্য এখানকার জেলেরা জোর দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারের প্রতিনিধি নুরুল হক মাস্টার বলেন, ‘বাজারে যে পাথর পাওয়া যাচ্ছে সেই পাথর দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে। নিন্মর্মাণের পাথর দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কিনা এতো প্রশ্নের জবাব আপনাদের দিব কেন। কিছু জানতে হলে অফিসের সাথে যোগাযোগ করেন।’
হাইমচর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) আনিসুর রহমান জানান, রাস্তা ছাড়া কৃষি জমির মাঝে ব্রিজটি তৈরি করার পূর্বে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জেলে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। চেয়ারম্যান নতুন একটি রাস্তা করে দেবার কথা বলার পরেই ব্রিজের কাজ শুরু করা হয়। সিডিউল মোতাবেক ব্রিজ নির্মাণে বোল্ডার পাথর ও সিলেকশন বালু ব্যবহার করতে হবে। নিম্নমানের পাথর দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। কৃষিজমির মাঝখানে ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে ঐ এলাকার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমাকে ফোন করেছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে জানানোর জন্য। তারপরও আমি জেনে ব্যবস্থা নেব।
প্রতিবেদক:মনিরুজ্জামান বাবলু
২৪ এপ্রিল ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur