এখন থেকে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত কোনো প্রকার দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত না হলে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় এবার ইরি-বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
এ বছর চাঁদপুরে ৬২ হাজার ১শ’ ৮৬ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ’ ৪৪ মে. টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনায় বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ আবদুল মান্নান বুধবার (১৭ এপ্রিল) চাঁদপুর টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুরে এ বছর চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার ৫শ’ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ২শ’ ৭৪ মে.টন। হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়েছে ৬২ হাজার ১শ’ ৮৬ হেক্টর এবং উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ’ ৪৪ মেট্রিক টন চাল।
চাঁদপুরের কৃষকরা কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে। পরিসংখ্যান মতে ৭২৬ হেক্টর বেশি চাষাবাদ ও ২ হাজার ৪শ’ ৭০ মে.টন চাল উৎপাদন বেশি হচ্ছে।
এদিকে চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়। জেলার তফসিলি ব্যাংকগুলোতে কৃষি উৎপাদনের জন্যে চলতি অর্থবছর ২শ’ ২৪ কোটি ১ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চাঁদপুর সদরে ৫ হাজার ৫শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৭শ’ ০৮ মে.টন। মতলব উত্তরে ৮ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৪ হাজার ৪শ’ ২৬ মে.টন।
মতলব দক্ষিণে ৪ হাজার ৮শ’ ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৯ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন। হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৮শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৮শ’ ০২ মে.টন।
শাহারাস্তিতে ৯ হাজার ৩শ’ ৫১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৮শ’ ৯৪ মে.টন। কচুয়ায় ১২ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৯ হাজার ৫শ’ ৫০ মেট্রিক টন। ফরিদগঞ্জে ৯ হাজার ৯শ’ ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৪শ’ ১ মে.টন এবং হাইমচরে ৬শ’ ২৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৩শ’ ৯৬ মে.টন চাল।
কৃষিবিদরা জানান কৃষকরা বর্তমানে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর, হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো বা ডিপ নলকূপ দিয়ে পানি সেচ, গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার, বোনার পরিবর্তে সারিবদ্ধ ভাবে ধান রোপণ, উন্নত বীজ, পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার, নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ইরি-বোরোর বাম্পর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাঁদপুর একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ, বীজ রোপণ বা বীজবপন করে সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী। সরকার চাষীদের সার ও উন্নতমানের বীজ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ২০% ভর্তুকিও দিচ্ছে ।’
চাঁদপুর কৃষি বিভাগের কৃষিবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘এবার চাঁদপুরে ইরি-বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা মৌসুমী বায়ূর প্রভাব ও আবহাওয়া অনূকুল থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ঔ কৃষিবিদ জানিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বোরো মৌসুমে চাল ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারি নির্দেশিত সময়ে ক্রয় করা ধান, চাল ও গম ।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা লক্ষ্যে সরকারের এ পদক্ষেপ বলে জানা গেছে। চাঁদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অনুমোদিত এবার ১৭ জন মিল মালিকগকে এ চাল সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুরে এবার সরকারিভাবে কেজি প্রতি বোরো চাল ৩৮ টাকা করে চাল ,ধান ২৪ টাকা ও গম ২৬ টাকা করে নির্ধারণ করেছে। সরকার চলতি বছর সারাদেশে ৫০ হাজার মে.টন গম ক্রয় করবে। চাঁদপুরে ১৭ মেট্রিক টন গম কেনা কথা রয়েছে।
এদিকে চাঁদপুর সরকারি গুদামে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮শ’ ৬২ মে.টন চাল ও ২ হাজার ৬শ’ ৫৪ মে.টন গম মজুদ থাকার তথ্য জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
প্রতিবেদক- আবদুল গনি
১৭ এপ্রিল, ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur