দফায় দফায় বৈঠক আলোচনার পর আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ এপ্রিলেই শবে বরাত পালনের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘চাঁদ দেখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারীদের দাবি যাচাইয়ে গঠিত’ ১১ সদস্যের উপ-কমিটির এক বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ এপ্রিল শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে দাবি করে যারা (মরুহি) ২০ এপ্রিল রাতে শবে বরাত পালনের কথা বলে আসছিলেন, তারা উপ কমিটির অনুরোধে ‘সাক্ষ্য দিতে না এসে কিছু শর্ত’ জুড়ে দিয়েছেন।
সেসব শর্তে যেভাবে সাক্ষ্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, শরিয়তে তার কোনো ‘ভিত্তি নেই’ মন্তব্য করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চাঁদ দেখার কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য না পাওয়ায় আজকের সভা ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির গত ৬ এপ্রিল ঘোষিত সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন।
“অর্থাৎ পহেলা শাবান গত ৮/৪/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ তারিখ থেকে শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল। সেই মোতাবেক আগামী ২১/৪/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ রাতে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত অনুষ্ঠিত হবে।”
এদিকে যাদের আপত্তির কারণে তারিখ পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেই ‘মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল’ সাক্ষী না আসার দাবিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যায়িত করেছে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, চাঁদ দেখেছেন এমন ১৭ জন তাদের লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়োর পরও ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘সাক্ষী আসেনি’ বলে দাবি করছে, যা মজলিসু রুইয়াতুল হিলালের ভাষায় ফাউন্ডেশনের আগের সিদ্ধান্ত ‘পুনর্বহালের একটি অপকৌশল’।
“সাক্ষীদের দাবি ছিল তারা তাদের আইনজীবী এবং মিডিয়ার সামনে সাক্ষ্য দেবে। কিন্তু সেটা শোনেনি ইফা। তাই তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।”
গত ৬ এপ্রিল ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভার পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ জানান, দেশের কোথাও শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই নিয়ম অনুযায়ী ১৪ শাবান রাত অর্থাৎ ২১ এপ্রিল রাতে শবে বরাত পালন করা হবে।
শবে বরাতে ছুটি থাকায় ওই সিদ্ধান্ত ধরে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়।
কিন্তু ‘মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল’ নামের ওই সংগঠনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, গত ৬ এপ্রিল শাবানের চাঁদ দেখা গেছে এবং তা প্রশাসনকে জানানো হলেও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বিশেষ সভায় বসে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে মজলিসু রুইয়াতিল হিলালের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, কোনো ধরনের বিভ্রান্তি যেন না থাকে সেজন্য একটি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে; ১০ সদস্যের এই কমিটি ১৭ এপ্রিলের মধ্যে বিভ্রান্তি নিরসনে সিদ্ধান্ত দেবে।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার ‘ভিন্নমত পোষণকারীদের’ সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলেও তারা ‘না আসার’ কথা জানিয়ে আগের তারিখেই শবে বরাত পালনের ঘোষণা দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
পরে ‘মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল’ এর পক্ষ থেকে পাঠানো একং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সাক্ষীদের ডাকলেও তাদের ভেতরে ‘ঢুকতে দেয়নি’।
“তাদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ না করে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন,” অভিযোগ করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
অপরদিকে হাইকোর্ট বলেছেন, পবিত্র শবে বরাত ধর্মীয় স্পর্শকাতর ইস্যু, এটি মামলার বিষয়বস্তু বানানো ঠিক হবে না। ২০ এপ্রিল দিবাগত রাতে শবে বরাত ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়েরের অনুমতিবিষয়ক শুনানিতে গেলো সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
আদালতে রিট আবেদন দায়েরের জন্য অনুমতি প্রত্যাশীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।
আদালত রিট দায়েরের জন্য অনুমতি দেননি বলে জানান এম সাইফুল আলম।
বার্তা কক্ষ
১৭ এপ্রিল, ২০১৯