Home / চাঁদপুর / ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির অব্যাহত রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি
Dipu moni

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির অব্যাহত রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপি বলেছেন, ইলিশ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একক মৎস্য প্রজাতি যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মাছ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে দেশে জাটকা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে ৬টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাটকা সংরক্ষণ এবং ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রমের প্রভাব সম্পর্কে আজকের কর্মশালায় গবেষণা ভিত্তিক ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি শনিবার বেলা ১১ টায় চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমীতে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই ) এর উদ্যোগে ‘ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রমের প্রভাব, মজুদ নিরূপণ ও জাটকা সংরক্ষণে গবেষণা অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এবারের শ্লোগান ‘কোনো জাল ফেলবো না, জাটকা ইলিশ ধরবো না’।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার পূর্বের ৪দিন, পূর্ণিমার দিন এবং পূর্ণিমার পরের ১৭ দিন অর্থাৎ মোট ২২ দিনের জন্য সারা দেশের নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গত ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৮%। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান এই ধারা অব্যাহত রাখাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য ইলিশের মজুদ নিরূপণ ও সর্বোচ্চ সহনশীল আহরণ মাত্রা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আরো নিবিড় গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের ইলিশসহ মৎস্য খাতের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। ইলিশ বিষয়ে নিবিড় গবেষণা অব্যাহত রাখার জন্য ২০১৬-২০১৭ আর্থিক সাল হতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর আওতায় ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ শীর্ষক ১টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। আশা করি, ইনিস্টিটিউট বিজ্ঞানীগণ ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তারা আরো সচেষ্ট হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কর্মশালার প্রধান বক্তার বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো.আশরাফ আলী খান খসরু এমপি বলেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ ইলিশের টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধি নির্ভর করে এর প্রজনন সফলতা, জাটকা রক্ষা এবং মাছ আহরণের পরিমাণের উপর। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির মূলে রয়েছে জাটকা রক্ষা। ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সরকার বিভিন্ন নদ-নদীর জাটকা প্রধান অঞ্চলে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। একেকটি অভয়াশ্রম ইলিশ উৎপাদনের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার ৪ দিন আগে, পূর্ণিমার দিন এবং পূর্ণিমার ১৭ দিন পরে অর্থাৎ মোট ২২ দিন সারা দেশের সাগর, নদ-নদীতে প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে উক্ত অভয়াশ্রমগুলোতে আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে যথোপযুক্তভাবে জাটকা নিধন প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে এবং ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ইলিশের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লক্ষ ১৭ হাজার মে. টনে উন্নীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৎস্য অধিদপ্তর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাটকা সমৃদ্ধ ১৭টি জেলার ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ২ লক্ষ ৩৮ হাজারেরও অধিক সুফলভোগী জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য মোট ৩৮ হাজার ১ শত ৮৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে, যা অতীতের কোন সরকার করে নাই। জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভিজিএফ প্রদানের ফলে তাদের অন্নের সংস্থান সুনিশ্চিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: রইছউল আলম মন্ডল।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, নৌ পুলিশ সুপার মো. জমসের আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম এবং মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন।

প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,শরীফুল ইসলাম
২৩ মার্চ,২০১৯