বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানায় সস্ত্রীক নিহত লেঃ কর্ণেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেনের মা জুলেখা বেগম (১১২) তাঁর পুত্র ও পুত্রবধুর হত্যাকারিদের বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে চান।
জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি আজও অতীত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে ন্যায় বিচারের প্রহর গুণছেন। শুধু একটাই চাওয়া কখন এ হত্যাকান্ডের রায় কার্যকর হবে, প্রিয়জন হারানোর দৃষ্টান্তমূলক রায় দেবে আদালত।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিডিআরের কিছু সংখ্যক বিপথগামী জওয়ানের নৃশংসতায় যে ক’জন সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছিলেন লেঃ কর্ণেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেন তাদের মধ্যে একজন। অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন বিডিআর সপ্তাহের দাওয়াতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে।
বিডিআর’র নিহত ডিজি শাকিল আহমদ ছিলেন তাঁর ব্যাচম্যাট ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। বিডিআর বিদ্রোহের সময় শাকিল আহমদের বাসাতেই স্ত্রী রশনী ফাতেমা আক্তার লাভলীসহ ছিলেন তিনি।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় লেঃ কর্নেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে গেলে দেখা যায় তাঁর মা জুলেখা বেগম নির্বাক চেয়ে আছেন। পুত্র ও পুত্রবধুর কথা বলতেই হাউমাউ কেঁদে উঠেন তিনি। বার্ধক্যজনিত ভুলে যাওয়ায় নির্বাক অশ্রুপাত ছাড়া আর তেমন কিছুই বলতে পারেন নি।
নিহতের বড় ভাই হাজী আমীর হোসেন পাটোয়ারী কান্না জড়িত কন্ঠে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, “আজ ১৩ বছর হলো আমার ছোটভাইকে দেখিনা, খুনিরা তাঁর স্ত্রীকেও মাফ করেনি। আমার মা এখনো দেলু দেলু বলে কাঁদেন। নিহত দম্পতির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ লেখাপড়া সমাপ্ত করে চট্টগ্রামে স্বামীর সাথে রয়েছেন। ছোট মেয়ে নাজিফা ইসমাম ইংল্যান্ডে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিষ্টনে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন।
নিহতের বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ জানান, “হত্যাকান্ডের সময় আমি লন্ডণ কলেজ অব একাউন্টেন্সিতে সিএ অধ্যয়নরত ছিলাম। আমার ছোট বোন নাজিফা ইশমাম সে সময় চট্টগ্রাম প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। ১৩ বছর আগের সে দুর্বিষহ স্মৃতি আজো হৃদয়পটে ভেসে উঠে। মানুষের মা কিংবা বাবা বিদায় নিলে একজন হয়তো পাশে থাকে আমরা এমনই দুর্ভাগা যে দুজনকেই একসাথে হারিয়েছি। আজ সবই আছে শুধু মাথার উপরের সবচেয়ে বড় ছায়া দু’টি হারিয়ে গেছে”।
এ হত্যাকান্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আদালতে মামলা বিচারাধিন, আমার বিশ্বাস আমরা ন্যায় বিচার পাবো”।
প্রসঙ্গত, শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারস্থ নিজমেহার পাটোয়ারি বাড়ির মৃতঃ আলতাফ হোসেন পাটোয়ারির কনিষ্ঠ পুত্র লেঃ কর্নেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি একজন কৃতি সেনা কর্মকর্তা ও স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। চাকরি হতে অবসরে গিয়ে চট্রগ্রামে সপরিবারে থাকতেন।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur