Wednesday, 13 May, 2015 12:32:28 AM
জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া (চাঁদপুর):
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচারে গ্রাহকের সঞ্চয়, ডিপিএস ও এফডিআরের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট মাল্টিপারপাস ও অপারেটিভ লি. নামে একটি এনজিও সংস্থা উধাও হয়ে গেছে।
জানা যায়, রাতের আঁধারে প্রতিষ্ঠানটির গেটে তালা ঝুলিয়ে কোম্পানীটির কর্মকর্তারা উধাও হয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের সেল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ক্ষোভের পাশাপাশি এলাকায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রতারণার শিকার শত শত গ্রাহক সাচার বাজারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় মোস্তফা প্লাজার সামনে এসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বর্তমানে অনেকেই তালবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটির সামনে এসে ভীড় জমাচ্ছে।
সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার সাচার বাজারস্থ লিপি স্টোরের পরিচালক মো. মোস্তফা কামালের মালিকানাধীন মোস্তফা প্লাজার ৩য় তলায় ২০১০ সালে বাৎসরিক ভাড়া চুক্তিতে ‘আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট মাল্টিপারপাস ও অপারেটিভ’ লি. নামে একটি এনজিও সংস্থা ভাড়া নেয়।
অফিসের সামনে একটি বিশাল সাইনবোর্ডও রয়েছে। সেখানে প্রধান কার্যালয় হিসেবে ‘৩২ সুলতান আহমেদ প্লাজা (৯ম তলা) পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০’ লেখা রয়েছে।
জানা গেছে, এই সংস্থাটির কর্মকর্তারা দীর্ঘ ৫ বছর সাচারের বায়েক, বড়দৈল, বাড়িয়ারা, রাগদৈল, নয়াকান্দি, মাঝিগাছা, বিতারা, তেগুরিয়া, সেংঙ্গুয়া, সফিবাদসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকদের কাছ থেকে সঞ্চয়, এফডিআর ও বাবদ লাখ লাখ টাকা আদায় করে নামমাত্র ঋণ বিতরণ করে আসছিল।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে এ সংবাদ তাৎক্ষণিক গ্রাহকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তাদের কষ্টার্জিত টাকা পয়সা ফেরত পেতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার গ্রাহক ওই কার্যালয়ের সামনে এসে ভীড় জমায়। এ সময় অফিসের সামনে গেইটে তালা ঝুলানো থাকায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।
গ্রাহকরা এ সময় আরডিপির অসাধু কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির বর্ণনা দিতে থাকে। এসময় প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা তাদের প্রতারণার বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ভুক্তভোগী এক গ্রাহক পালাখাল বাজার ব্যবসায়ী আঃ মালেক চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট মাল্টিপারপাস ও অপারেটিভ লি.-এর কতিপয় কর্মকর্তা দোকানের ঋণ দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় সঞ্চয় এনেছে।’
সাচারের কান্দিরপাড় গ্রামের যুবক ফারুক হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘এফডিআর বাবদ এ সংস্থায় আমি ৫ লাখ টাকা জমা রাখি।’
কলাকোপা গ্রামের সালাউদ্দীন ভূইয়া হীরা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমার ২ মেয়ের নামে এফডিআর বাবদ ৩ লাখ টাকা জমা রাখি।’
একই গ্রামের মোশারফ হোসেন জানান, এফডিআর বাবদ আমি ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এই সংস্থায় জমা রাখি, সাচার বাজারের আল-ইনসাফ লাইব্রেরীর পরিচালক নূরুল হক প্রধান জানান, আমি এই সংস্থায় এফডিআর বাবত ৭১ হাজার টাকা জমা রাখি।’
এমনিভাবে শত শত গ্রাহকরা এ সংস্থায় সঞ্চয়, এফডিআর বাবদ লাখ লাখ টাকা জমা রাখে বলে দাবি করেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা আরো জানিয়েছে, হাতিরবন্দ গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আঃ মান্নানের মাধ্যমে এই সংস্থায় বেশ কিছু গ্রাহক প্রায় ৬০ লাখ টাকা জমা রাখে। আঃ মান্নান স্থানীয় গ্রাহকদের বিভিন্ন ভাবে এই সংস্থায় টাকা জমা রাখার জন্য উৎসাহিত করে। ঘটনার পর থেকে আঃ মান্নান সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পলাতক রয়েছে।
ভবনের মালিক মোঃ মোস্তফা কামাল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট মাল্টিপারপাস ও অপারেটিভ লিঃ কর্মকর্তাদের ২০১০ সালে অফিস ভাড়া দেই। চলতি বছর ভাড়া না দিয়ে আমাকে কিছু না জানিয়ে অফিসে তালা দিয়ে চলে যায়। তবে কি কারণে তারা চলে গেছে তা আমার জানা নেই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওসমান গনী মোল্লা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেষ্টন্ট মাল্টিপারপাস ও অপারেটিব লিঃ গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার বিষয়টি শুনেছি।’
এর আগে কচুয়ায় মেঘনা মাল্টিপারপাস লিঃ, কচুয়া পল্লী উন্নয়ন কো-অপারেটিভ, সাচার দক্ষিণ বাজারে জনকল্যাণ সংস্থা, উত্তর শিবপুরে আশ্রয় মাল্টিপারপাস গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এসব কথিত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিনিয়ত টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
চাঁদপুর টাইমস : জিএএন/ ডিএইচ/এমআরআর/২০১৫
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।