Saturday, May 09, 2015 08:41:08 PM
শাহজাহান শাওন :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সি আর আবরার বলেছেন, মালয়েশিয়ায় যে প্রক্রিয়ায় অভিবাসন প্রক্রিয়া চলছে তা জটিল। এ প্রক্রিয়া সরকারের যথেষ্ট গ্যাপ রয়েছে। কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ারফুল লোকজন জড়িত। দুষ্ট চক্রের কারণে আজ মানবপাচারের বিষয়টি মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর টিসিবি অডিটোরিয়োমে অনুষ্ঠিত হয় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১১৬তম পর্ব। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন তিনি।
ওয়ালিউর রহমান মিরাজের প্রযোজনায় ও আকবর হোসেনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালি-উর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাবিহা লাইজু নামে এক দর্শক প্রশ্ন করেন, যেকোনো উপায়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টার কারণে ঘটে চলা মানবপাচার এবং এর ফলে অনেকের ভাগ্যে যে করুণ পরিণতি ঘটছে, সরকার তা বন্ধ করতে পারছে না কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিক্ষক সি আর আবরার বলেন, দেশে যারা চাকরি প্রত্যাশা করছেন তারা চাকরি না পেয়ে বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এক্ষেত্রে সেটাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি মানবপাচার করে আসছে। এ চক্র এক সময় ছোটই ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে পাওয়ারফুল লোকজন ইনভল্ভ থাকায় এই চক্র মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
মানবপাচার কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের লোকাল এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের নাম উঠে এসেছে পত্রিকায়। তাদের ইনভলমেন্টের কারণে মানবপাচার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কোস্টগার্ড বলছে মানবপাচার হচ্ছে না! তাহলে এর আগে যে ১৭০ জনকে উদ্ধার করা হলো তারা কারা, আর ওই ঘটনায় যারা জড়িত বলে নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? কেনই বা এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ফলোআপ আসছে না?
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালি-উর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারই চেয়েছেন সরকারিভাবে লোকজন বিদেশে যাবে। এজন্য ব্যাংকও খুলেছে সরকার। কিন্তু গ্রাম থেকে যারা বিদেশে যেতে চাইছেন তাদের বেসরকারিভাবে পাচার করা হচ্ছে প্রলোভন দেখিয়ে।
তিনি বলেন, মানবপাচার বন্ধে কিছুটা হলেও বেসরকারি প্রক্রিয়া ওপেন রাখা উচিত। বাংলাদেশ সরকার লোন দিয়েও অভিবাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে যা পৃথিবীর কোনো দেশে নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এক দর্শক মন্তব্য করেন, সরকারের প্রক্রিয়ায় ভুল ছিল। কারণ ভিসা প্রসেসিংয়ে অনেক দেরি হয়েছে। অপর এক দর্শক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, সভ্যতার শুরু থেকেই মানবপাচারের ঘটনা ঘটে এসেছে। এখনো ঘটছে। আগে বেসরকারিভাবে লোকজন পাঠানো হতো; এখন সরকারিভাবে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়েই লোকজন পাঠানো হচ্ছে।
এক দর্শক বলেন, দুষ্টচক্ররা যদি মানবপাচার করেই থাকেন তবে তাদের শনাক্ত কেন করা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা বলছি না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি সফল। শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় সোচ্চার। তারা মানবপাচার বন্ধে কাজ করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, মানবপাচার বন্ধে সরকারের ব্যর্থতার কিছু কারণ আছে। যেসব স্থান দিয়ে মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে সেখানে কোস্টগার্ড, বিজিবি, নৌ পুলিশ থাকলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। নজরদারি ও সরকারি প্রক্রিয়ায় একটা গ্যাপ আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes