Thursday, May 07, 2015 11:42:02 PM
বিশেষ প্রতিনিধি :
গায়ের রং কালো, তবু তার কেন সন্তান ধারণের মানবিক আকাঙ্ক্ষা? কালো মায়ের গর্ভে যে কালো সন্তানই জন্ম নেবে।— এমন অভিযোগে পাপিয়া আক্তার (১৯) নামে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী ও স্বজনরা। যাকে ১৫ মাস আগে প্রেমের মাধ্যমেই বিয়ে করে স্বামী আশিকুল।
ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সাধককালী গ্রামে। শ্বশুরবাড়িতে শনিবার সকালে পাপিয়ার শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী আশিকুল হক, শ্বশুর আনোয়ারুল হক খোকন, শাশুড়ি পারুল বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা।
ওই ঘটনায় শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ পাপিয়া বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল তার মৃত্যুর তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের গৃহবধূ পাপিয়া আক্তারকে শনিবার বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন।
পাপিয়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বাটিঘাগড়া গ্রামের মো. নজির মিয়ার মেয়ে।
বার্ন ইউনিটে মেয়ের নিথর দেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়া বাবা নজির মিয়া জানান, ১৫ মাস আগে করিমগঞ্জের সাধককালী গ্রামের আশিকুল হক প্রেম করে পাপিয়াকে বিয়ে করে। কিন্তু পরে মেয়ে কালো হওয়ায় ছেলের বাবা-মা যৌতুক দাবি করে।
তিনি জানান, কিন্তু গরিব হওয়ায় তাদের সেই যৌতুক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ জন্য তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির লোকজন বিভিন্ন সময় তার শারীরিক অত্যাচার চালাতো। বিশেষ করে মেয়ে কালো হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির কেউ তাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে চায়নি।
নজির মিয়ার আরও জানান, সর্বশেষ শনিবার সকালে স্বামী আশিকুল হক, শ্বশুর আনোয়ারুল হক খোকন, শাশুড়ি পারুল বেগম, দেবর মাসিকুল হক ও ফুফু শাশুড়ি হাওয়া বেগম কেরোসিন ঢেলে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে তাকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ও পরে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
ওই দিন রাতে গুরুতর দগ্ধ পাপিয়া আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রথম সন্তানকে জোর করে স্বামী মেরে ফেলে। পরে আবারও গর্ভে একটি সন্তান আসে। এই সন্তানটিও মেরে ফেলতে চাপ দেয়। তখন এর কারণ জানতে চাইলে স্বামী বলে, তোর গায়ের রং কালো। তোর গর্ভে যে ছেলে-মেয়ে হবে তাও কলো হবে। তুই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যা। কিন্তু এতে অস্বীকার করলে শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।’
এ ঘটনার পরের দিন পাপিয়ার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় স্বামী আশিকুল হক, শাশুরি পারুল আক্তার, দেবর মাসিকুল হক, শ্বশুর আনোয়ারুল হক ও ফুফু শাশুড়ি হাওয়া বেগমকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ঘটনার পর পালানোর চেষ্টাকালে প্রতিবেশীরা দেবর মাসিকুলকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেন। পরে তাকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান বলেন, পাপিয়া মারা গেছেন শুনেছি। ওই ঘটনার এক আসামিকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন :
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur