Thursday, May 07, 2015 01:00:03 AM
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট:
১০১ নারী খুনের টার্গেটকারী, ১০ নারী খুনের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামী রসু খাঁর পরে এবার চাঁদপুরের গুলিশায় নুরুল ইসলাম লেদার নামের এক ভয়ংক অপরাধীর আবির্ভাব ঘটেছে।
ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর ৩ থানা সীমানা এলাকায় পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে দীর্ঘ বহু বছর যাবত একের পর এক নানা জঘণ্য দুষ্কর্ম করে এলাকার জনজীবন মারাত্মকভাবে বিষিয়ে তুলেছে লম্পট নুরুল ইসলাম লেদা (৪০) নামের আরেক ভয়ংক রসু খা।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে কুখ্যাত অপরাধী লেদাকে ধরার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সুজিত রায় নন্দি পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ফোন করতে বাধ্য হন।
তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর যে-কোনোভাবে হোক এলাকার সকল অপরাধের নাটের গুরু লেদাকে ধরার জন্য উল্লেখিত ৩ থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পুলিশ হণ্যে হয়ে খুঁজলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লেদাকে ধরতে পারেনি।
নব্বই দশক থেকে চাঁদপুরের কোর্ট-কাচারীতে দাগী আসামী হিসেবে সাব্যস্ত এবং থানা পুলিশের খাতায় ‘মোষ্ট ওয়ান্টেড’ হওয়া সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার টিকিটিরও সন্ধান পাচ্ছে না। এর নেপথ্য কারণ হচ্ছে বিভিন্নসময় ৩ থানা এলাকায় তার চাতুর্যপূর্ণ স্বল্প সময়ের অবস্থান। সে দীর্ঘদিন যাবত কোনো এলাকায়ই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে না। একেক সময় একেক এলাকায় অবস্থান করে। কোনো এলাকায়ই বেশিক্ষণ থাকে না। তাই ৩ থানা পুলিশ শত চেষ্টা করেও এলাকার চিহ্নিত অপরাধী লেদাকে ধরতে পারছে না।
এ ব্যাপারে ৫মে মঙ্গলবার এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকের বেশ ক’জন সাংবাদিক সরেজমিনে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে , ফরিদগঞ্জ থানাধীন হরিণা গ্রামের মোঃ চুন্নু মিয়া রাড়ীর কন্যা জেসমিন আক্তার (১৬) এর সাথে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর সদর উপজেলার গুলিশা গ্রামের অলি উল্লাহ শেখের পুত্র বাবু শেখ (২৩) বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে গভীর প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে। এতে জেসমিন এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে এবং বাবু শেখকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।
ঘটনার দিন গত ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখ রাত ১০ টার দিকে বাবু শেখ মোবাইলে জেসমিনকে বিয়ে করার কথা বলে বাড়ির অদূরে বাগানে নিয়ে প্রথমে নির্যাতন এবং পরে সাঙ্গপাঙ্গদের সহযোগিতায় গলাটিপে হত্যা করে লাশ বাড়ির অদূরে বিলের মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
গভীর রাতে বাবু শেখ, লেদা, আলআমীন, অলি উল্লাহ শেখ, মোঃ বাবুল ও আনোয়ার হোসেন জনৈক সি.এন.জি ড্রাইভারকে ৫ হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে লাশ ধানুয়া ডাকাতিয়া নদীর কস্তুরীর মধ্যে ফেলে দেয়ার কথা বললেও উক্ত সি.এন.জি ড্রাইভার শেষ পর্যন্ত রাজি না হলে তারা সকলে বিলের মাঝ থেকে লাশ গুম করতে ব্যর্থ হয় বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।
পরে খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করায়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা (নং-২৫, তাং ২৬/১/২০১৫ ইং) এবং চুন্নু মিয়া ফরিদগঞ্জ থানায় জিডি (নং-৩৬,তাং- ৮/৩/২০১৫ ইং) দায়ের করে।
এলাকাবাসী জানায়, নুরুল ইসলাম লেদা নানা কারণে এলাকায় মারাত্মক বিতর্কিত এবং সমাজবিরোধী হিসেবে থানা পুলিশ, কোর্ট-কাচারী, ইউনিয়ন পরিষদ, মানবাধিকার কমিশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে চিহ্নিত। গুলিশা এবং হরিণাসহ বিভিন্ন এলাকার ১০/১২ জন বিতর্কিত নারীর সাথে লেদার সম্পর্ক রয়েছে বলে শোনা যায়। তাই এলাকার লোকজন তাকে ‘আরেক রসু খা’ বল্লে সহজে চিনে নেয়।
এলাকায় সমাজবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত ভয়ংকর অপরাধী লেদার বিরুদ্ধে বালিয়ায় ইউপি সদস্যের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর, লেদা বাহিনীর প্রধান হিসেবে লেদা কর্তৃক গুলিশা গ্রামবাসীর কাছে চাঁদা দাবি এবং চাঁদা না দেয়ায় নিরীহ দোকানদার সোহাগকে লেদা কর্তৃক বেদম পিটিয়ে গুরুতর জখম করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো , পূর্ব শত্র“তার জের ধরে স্বরূপানন্দ শীলকে এসিড নিক্ষেপ করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো, যৌতুকের বলি ছামিনা হত্যা মামলা ধামাচাপা দিয়ে সাজানো ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে এলাকার নিরীহ লোকজনকে জড়িয়ে মারাত্মক হয়রানি করা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ফেরারী আসামী হওয়ার আদেশ, জেলার শীর্ষ অপরাধী হিসেবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার আদেশসহ এলাকায় শত-সহস্র অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকার দুর্ধর্ষ অপরাধী নুরুল ইসলাম লেদা প্রেমপ্রতারিত অন্তঃসত্ত্বা অসহায় জেসমিন হত্যার মূল আসামী তার আপন ভাগিনা বাবু শেখসহ সকলে বাঁচার জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে গোপন মিশনে নামার খবর অবশেষে ফাঁস হয়ে এখন মানুষের মুখে মুখে গোটা এলাকায় চাউর হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুর টাইমস/ডিএইচ/২০১৫