বরিশাল নগরীর সিকদার পাড়ার মাদরাসার কী অবস্থা। ১৩৫০ টাকা পাওনা ছিল। পরীক্ষার আগের দিন ১২০০ টাকা দিয়ে এসেছি। বাকি ১৫০ টাকা পরীক্ষার মধ্যে দেব বলে আসছি। তারা কী করলো আমার বাচ্চার গায়ে হাত দিল, আর বলল বাকি টাকা না দিলে পরীক্ষা দিতে পারবি না। এটাই কী মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা।
আমার বাচ্চা ভয়ে বার বার বলতে থাকে টাকা দিয়ে আসো না হলে আমি পরীক্ষা দেব না। টাকা পাবে মা-বাবার কাছে, বাচ্চাদের ভয় দেখালে কী পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষার ফি ছিল ১০০ টাকা। আর বিদ্যুৎ বিল ছিল ৫০ টাকা। মোট ১৫০ টাকা। একটি বাচ্চার এক মাসে ৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল কী লাগে’।
নিজের ছেলের সঙ্গে মাদরাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেন বরিশাল নগরীর সিকদার পাড়ার বাসিন্দা কামরুজ্জামান বাবলু। এরপরই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুকে এ নিয়ে নিন্দা জানিয়ে শেয়ার ও কমেন্ট করেছেন অনেকে।
বিষয়টি বরিশাল পুলিশের অপরাধ ও মিডিয়া শাখার সদস্যদের নজরে আসে। এ নিয়ে শিক্ষক মো. সিরাজকে আটকে অভিযানে নামে তারা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সিকদার পাড়া মাদরাসা প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক মো. সিরাজকে আটক করা হয়। আটক শিক্ষক মো. সিরাজের বাড়ি সদর উপজেলার লাহার হাট এলাকায়।
শিক্ষার্থীর বাবা কামরুজ্জামান বাবলু বলেন, আমার সাত বছর বয়সী ছেলে আহাদুজ্জামান মাহি নগরীর শিকদার পাড়া নুরানি মাদরাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত সপ্তাহ থেকে তার পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার ফি বাবদ ১৩৫০ টাকার মধ্যে ১২০০ টাকা পরিশোধ করেছি। বাকি ১৫০ টাকা পরীক্ষা চলাকালীন পরিশোধের অঙ্গীকার করেছি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রথম পরীক্ষার দিন মাদরাসার শিক্ষক মো. সিরাজ বকেয়া টাকার জন্য আমার ছেলে মাহিকে বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে কান ধরে উঠবস করান এবং মারধর করেন। টাকা না দিলে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। অনুনয়-বিনয়ের পরও শিক্ষকের নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পায়নি মাহি। শিক্ষকের মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন মাহিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ভয়ে মাহি মাদরাসায় যেতে চায় না। মারধরে মাহির কানে আঘাত লেগেছে। তার চিকিৎসা চলছে। মাহির বিষয়টি আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।
বরিশাল পুলিশের অপরাধ ও মিডিয়া শাখার সদস্য ওবায়দুল হক বলেন, ফেসবুকে মাদরাসা শিক্ষকের নিষ্ঠুরতার পোস্টটি নজরে আসলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযান চালিয়ে শিক্ষক মো. সিরাজকে আটক করা হয়।
শিক্ষক মো. সিরাজ বলেন, বকেয়া বেতন আদায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কঠোর আচরণের নির্দেশনা ছিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির। তবে মাহিকে মারধর করা হয়নি। কান ধরে শাসন করা হয়েছিল।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রাসেল বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। (জাগো নিউজ)
বার্তা কক্ষ
০৯ ডিসেম্বর,২০১৮