বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও চাঁদপুর শহরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২৭তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ ১ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এবং ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবসে বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এরইমধ্যে মেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি সভাসহ সকল কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানান মেলা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তারা।
এ বছরও বিজয় মেলা মাঠ লাল সবুজের সংমিশ্রণে ফুটে উঠেছে। বিজয় মেলার প্রবেশদ্বার, মূল গেইট শোভা বর্ধন করেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের সেই প্রতিচ্ছবি দিয়ে। এছাড়া আরও স্থান পেয়েছে জাতীয় ৪ নেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের ছবিগুলো।
আজ ১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় এই বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা করা হবে। আগামী ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। উদ্বোধক থাকবেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম.এ ওয়াদুদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করবেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উপদেষ্টা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিতির আমন্ত্রন জানিয়েছেন স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বদিউজ্জামান কিরণ, উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মহসিন পাঠান এবং মহসচিব হারুন আল রশিদ।
এ বছর বিজয় মেলার মাঠে অনেকটাই ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বেস্ট ফিটিং ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয় স্টলটি। এছাড়া বিজয় মেলায় বিগত বছরের মত এবছরও ১শ ৩০টি বাণিজ্যিক স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে স্মৃতি সংরক্ষনের একটি বিশাল চিত্র প্রদর্শনী স্টল, গেটের দু’পাশে রয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম।
চাঁদপুরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বিনোদন প্রদর্শনীর জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকারের একটি বিজয় মঞ্চ। বিগত বছরের ন্যায় এ বছর ২৭ তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মাঠেই তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন।
১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ জাতির জনকের ভাষনের পর চাঁদপুরে মুক্তিযোদ্ধারা
এই মাঠে প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু করে। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে সেদিন যুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই এই মাঠটি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে আছে। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা এ বছর ২৭ তম বিজয় মেলায় এসে দাঁড়িয়েছে।
এ বছরও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে আগরতলার ত্রিপুরার স্বতীষ ইনষ্ট্যান্ট শারদ সম্মাননা, মতলবের আলো সেরা কন্ঠ পুরষ্কার বিতরণ, দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠন, বঙ্গবন্ধু আবৃতি পরিষদ, স্বদেশ সাংস্কৃতিক সংগঠন, অগ্নিবীনা সাংস্কৃতিক সংগঠন, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, খেলাঘর জেলা কমিটি, শিশু একাডেমি, বিবেকানন্দ যুব সংঘ, নৃত্যধারা,
সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোট চাঁদপুর, চাঁদপুর মঞ্চ, শারদা দেবী সঙ্গীত নিকেতন হাজীগঞ্জ, ঝিলমিল সাংষ্কৃতিক সংঘ কচুয়া, পুলিশ নারী কল্যাণ সংগঠন পুনাক, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, চাঁদপুর ললিত কলা, সঙ্গীত নিকেতন, চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বাংলার মুখ সাংষ্কৃতিক সংগঠন, নবজাগরণের সাংস্কৃতিক সংগঠন, রক্সি মিউজিকাল গ্রুপ, উদীচী চাঁদপুর, স্বাধীন বাংলা থিয়েটার, বাংলাদেশ হাওয়াইইন গিটার শিল্পী পরিষদ, রংধনু সৃজনশীল নৃত্য সংগঠন,
স্বপ্ন কুড়ি সাংস্কৃতিক সংগঠন, নটমঞ্চ চাঁদপুর, সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়, মৃত্তিকা মিউজিক একাডেমি, উদয়ন সঙ্গীত বিদ্যালয়, নতুন কুড়ি সাংষ্কৃতিক সংগঠন, নৃত্যাঙ্গন, চাঁদপুর ড্রামা, সুরধ্বনি সঙ্গীত একাডেমি, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন, রঙের ঢোল, ও বিজয় দিবসে জেলা শিল্পকলা একাডেমি।
এদিকে বিজয় মেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতিমূলক সভা মেলা মঞ্চের সম্মুখে গতকাল ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মহসিন পাঠানের সভাপতিত্বে এবং মহসচিব হারুন আল রশিদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ বদরুন নাহার চৌধুরী, মেলার স্টিয়ারিং কমিটির সহ-সভাপতি এডভোকেট বিণয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বদিউজ্জামান কিরণ, প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদক মির্জা জাকির, উদযাপন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান,
মাহফুজুর রহমান টুটুল, স্মৃতিচারন পরিষদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব মাস্টার, মাঠ ও মঞ্চ পরিষদের আহবায়ক ইয়াহিয়া কিরন, সদস্য সচিব জাফর ইকবাল মুন্না, সাংস্কৃতিক পরিষদের আহবায়ক তপন সরকার, যুগ্ম-আহবায়ক কৃষ্ণা সাহা, সাহিত্য পরিষদের আহবায়ক ডাঃ পিযূষ কান্তি বড়ুয়া, মিডিয়া পরিষদের সদস্য সচিব কে এম মাসুদ, স্মৃতি সংরক্ষণ-৭১ পরিষদের সদস্য সচিব অভিজিত রায়।
সভায় বক্তারা বলেন, বিজয় মেলার গৌরবের ২৭ বছরের পূর্তি সুন্দর ও আনন্দঘন পরিবেশে হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিজয় মেলার সার্বিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আগামীকাল ১ ডিসেম্বর শুভ সূচনা হবে। আগামী ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবেসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে সেদিন একটি জাকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রা করা হবে।
মেলার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কর্ম দক্ষতায় মাঠ ও মঞ্চ, স্মরনিকা ও স্মৃতি সংরক্ষন প্র্রদশনী স্টল প্রস্তুত করা হয়েছে। বিজয় মেলাকে কেউ বন্ধ করতে পারবে না, যত বাঁধাই আসুক মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বিজয় মেলা চলমান থাকবে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ খান, মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মুুজিবুর রহমান, আইন শৃঙ্খলা পরিষদের প্রধান সমন্বকারী সুফী খায়রুল আলম খোকন, সাংস্কৃতিক পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক পিযূষ কান্তি রায় চৌধুরী,
রুমা সরকার, অনিতা নন্দী, সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্য সচিব মৃনাল সরকার, মাঠ মঞ্চের যুগ্ম-আহবায়ক এডভোকেট আমির উদ্দিন মন্টু, মানিক দাস, সাহিত্য স্মরনিকা পরিষদের সদস্য সচিব রাজন চন্দসহ মূল কমিটি ও বিভিন্ন উপ পরিষদের সমন্বকারীরা।
বিজয় মেলা মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রাপ্ত
১ ডিসেম্বর, ২০১৮