পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সহযোগিতায় কুমিল্লার একটি হাসপাতালে সন্তান রেখে চলে যাওয়া মা রোকেয়াকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সন্তানের কাছে। গত ১৮ আগষ্ট জন্ম নেয়া চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের শাহআলম- রোকেয়া দম্পত্তির ঘরে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান।
সাড়ে ৬মাসে ডেলিভারি এবং ৭০০গ্রাম ওজনের প্রিম্যাচিউর বেবির জীবন সংকটাপন্ন হওয়ায় ভর্তি করা হয় কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালে। ৭দিন চিকিৎসার পর ২৪ আগষ্ট শিশুটিকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে হাসপাতাল থেকে চলে যায় শিশুটির দরিদ্র বাবা-মা।
এমন অবস্থায় শিশুটির ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চাঁদপুর টাইমসসহ একাধিক গণমাধ্যমে এমন সংবাদের পর পুলিশের সহযোগিতায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাকিলা থেকে শিশুটির মা রোকেয়া বেগমকে নিয়ে আসা হয় নবজাতক শিশুটির কাছে।
রোকেয়া বেগম জানান, তার দুটি সন্তান জন্মের পর মারা যায়। এই শিশুটির চিকিৎসায় অনেক টাকা বিল আসায় তারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার স্বামী একজন দিনমজুর। হাসপাতাল থেকে বাড়ি গিয়ে স্বামী শাহআলমও নিরুদ্দেশ। এমন অবস্থায় পুলিশের সহযোগিতায় সে তার সন্তানকে ফিরে পেয়েছে। শিশুটির জন্য সবার দোয়া চাইলেন রোকেয়া।
বুধবার দুপুরে নবজাতকের কাছে মা রোকেয়া বেগমকে নিয়ে আসেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর ও সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। শিশুটির চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন করা হবে বলে গণ্যমাধ্যমকর্মীদের জানান তারা।
পুলশি সুপার সয়ৈদ নূরুল ইসলাম বলনে, এটি মূলতঃ দারিদ্রের কারনেই হয়েছে। শিশুটির মা-বাবা চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করতে না পেরেই তারা পালিয়ে গিয়েছিলো। এখন সকলে মিলে আমরা শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় বহন করবো এবং এটা নিয়ে তার মাকে আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না।
জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলনে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে। সেই সাথে আমরা বিত্তবানদের নকিট আহ্বান করবো যেন শিশুটির চিকিৎসায় দরিদ্র পিতা-মাতার পাশে এসে দাড়ায়।
সিভিল সার্জন ডাঃ মুজিবুর রহমান বলেন, আজ থেকে এই শিশুটির সকল দায়িত্ব আমাদের। সুস্থ হয়ে বাবা মায়ের কোলে না যাওয়া পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলতে থাকবে।
শিশুটির চিকিৎসায় বিশেষ ছাড় ঘোষনা করেছে কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানায় এ পর্যন্ত শিশুটির চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অক্সিজেন বিল সহ নূন্যতম খরচ নেবেন বলে জানান।
এদিকে পরির্দশন শেষে তাৎক্ষণিক ভাবে শিশুটির নাম রাখা হয় দৃষ্টান্ত। পুলশি সুপার সয়ৈদ নূরুল ইসলাম তার নামটি প্রস্তাব করেন। এসময় শিশুটির মা পাশে ছিলেন। জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলনে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার এ ঘটনা অবশ্যই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
চাঁদপুর টাইমসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন- ২ *কুমিল্লায় নবজাতককে ফেলে আসার রহস্য জানালেন হাজীগঞ্জের সেই দম্পতি
প্রতিবেদন- ১ *নবজাতক ছেলেকে হাসপাতালে রেখেই পালিয়েছেন হাজীগঞ্জের মা-বাবা
জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা