দল থেকে বহিষ্কৃত শতাধিক নেতাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গত ১০ বছরে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা-মহানগরের যেসব নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এতে স্থান পেয়েছে প্রায় ৪০০ নেতার নাম। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচন টার্গেট করে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, ইতিমধ্যে তালিকার প্রায় ২০০ নেতার নাম লল্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে। বাকি নামগুলো দুই একদিনের মধ্যে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, অনেকে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে দলের কাছে আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। এর বাইরে আর কিছু নয়।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, একই নীতি আদেশের পুরনো বন্ধুদের একই ধারায় নিয়ে এসে প্রতিযোগিতা করলে এতে দোষের কিছু নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বহিষ্কৃত নেতাদের তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বহিষ্কৃতদের মধ্যে যাদের বড় ধরনের কোনো অপরাধ নেই, দলের নেতৃত্বকে বিশ্বাস করেন এবং অন্য কোনো দলেও যাননি, তাদের বিএনপিতে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হতে পারে বলেও জানান ওই নেতা।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১১টি ইস্যুতে আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এর আগে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সারা দেশের জেলা, উপজেলাপর্যায়ে ত্যাগী আর রাজপথের নেতাকর্মী দিয়ে কমিটি ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে হাইকমান্ড।
এরই অংশ হিসেবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। চলতি মাসের শুরুতে বহিষ্কৃতদের নামের তালিকা করতে দলের দফতরকে নির্দেশনা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তার নির্দেশনা পেয়ে গত ১০ বছরে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের নামের তালিকা তৈরি করছে দলটির কেন্দ্রীয় দফতর শাখা। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় দুই শতাধিক বহিষ্কৃত নেতার নামের তালিকা লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আর দ্বিতীয় ধাপের তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রমও শেষপর্যায়ে।
দুই-একদিনের মধ্যে এ তালিকা প্রস্ততি করে সেটি লন্ডনে পাঠানো হবে। এসব তালিকায় বহিষ্কৃত নেতার নাম, পদবি, ঠিকানা, বহিষ্কারের কারণ ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তালিকায় স্থান পাওয়া বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে যারা আছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- পাবনা জেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টু, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাবেক নেতা হযরত আলী, নাটোর জেলার সাবেক সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ডিউক, নাটোর জেলার সাবেক নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, আব্দুল মান্নান, খন্দকার জোবায়ের, ভোলা জেলার সাবেক সদস্য আক্তারুজ্জামান টিটব, বরগুনার তালতলী উপজেলার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মামুন, টাঙ্গাইল জেলার সাবেক উপদেষ্টা আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া জেলার সাবেক সদস্য আলতাব হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলার সাবেক সহ-সভাপতি মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সাবেক সভাপতি রফিকুর রহমান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি আজগর আলী এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এমএ হান্নান।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বহিষ্কৃতদের তালিকার পর রাগ-ক্ষোভ ও অভিমানে যেসব নেতা নিষ্কিয় রয়েছেন, তাদের পাশাপাশি দলের কথিত সংস্কারপন্থী নেতাদের তালিকা করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাদেরও দলে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
বার্তা কক্ষ