এক নজির বিহীন ঘটনা ঘটল ভারতের তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে। ঘটনার দৃশ্য সিনেমার দৌলতে যদিও বেশ চেনা, তবে সেলুলয়েডের পর্দা আর বাস্তব জীবন দু’টোর মাঝে ফারাক যথেষ্ট।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী যুবক-যুবতীর বিবাহ ঘিরে উচ্ছ্বাস দেখা গেল তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে। নিঃসন্দেহে ঘটনাটি মর্মস্পর্শী। তবে এদের বিবাহ আর পাঁচটা সাধারণ দম্পতিদের থেকে অন্যরকম। বাস্তব সমাজে নিজেদের একটা জায়গা তৈরি করতে এই ধরনের দম্পতিদের সংগ্রাম একেবারে আলাদা।
সুতাহাটার প্রত্যন্ত গ্রাম রঘুরামপুর। সেই গ্রামের ছেলে দেবকুমার। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এলাকারই একটি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলে বেড়ে ওঠা। এদিকে পাশের গ্রাম বাহারডাবের মেয়ে মৌমিতা। সুতাহাটার ওই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর স্কুল ‘শ্রুতি’তেই পরিচয় দু’জনের।
দু’জনেই কথা বলতে পারে না, শুনতেও পায়না। কথা শুধুই চোখে চোখে। ধীরে ধীরে দেবকুমারের ভাল লেগে যায় মৌমিতাকে। কিন্তু লাজুক স্বভাবের দেবকুমার মৌমিতাকে মনের কথা বোঝাতে পারে না।
অবশেষে লজ্জাকে দূরে সরিয়ে দু’জনের মধ্যে তৈরি হয় বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। এসবের মাঝেও কোথাও যেন ভয় গ্রাস করেছিল এই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী যুগলকে। ভয়টা সমাজের। আর ঠিক সেই সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ায় দুই পরিবার।
এরপর রবিবার এক অভিনব বিয়ের আসরে জমায়েত হলেন তমলুকের প্রাচীন বর্গভীমা মন্দিরের এলাকাবাসীরা। তারা সকলে প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন নব দম্পতিকে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর স্কুল ‘শ্রুতি’-র কর্ণধার পান্নালাল দাসের হাত ধরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন তারা।
তমলুকের প্রাচীন বর্গভীমা মন্দিরে শুভদৃষ্টি সম্পন্ন হয় ওঁদের। কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়াটাও কিন্তু বাদ পড়েনি। দুই পরিবারের মানুষজনের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষও খুশি এমন মধুর মিলনের সাক্ষী হতে পেরে।
মৌমিতা স্বনির্ভর হতে তালিম নিচ্ছেন সেলাইয়ের আর দেবকুমার শিখছেন মোবাইল সারাইয়ের কাজ। কলকাতার সিঁথির মোড় থেকে ১৩ জনের একটি মহিলাদের দল রবিবার তমলুকের প্রাচীন বর্গভীমা মন্দির পরিদর্শন করতে আসেন। তারা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ের খবর শুনে বেজায় খুশি। তাঁরাও সামিল হয় এই বিয়ের অনুষ্ঠানে।-কলকাতা টুয়েন্টিফোর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur