বর্ষায় বিভিন্ন নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে আশপাশের এলাকা, ভাঙতে শুরু করেছে নদীর তীর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ।
শরীয়তপুর
বর্ষার শুরুতেই ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মার তীর। আর তাই শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ৪৩০ মিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে নড়িয়া মাহিপাড়া কৃর্ত্তিনাশা নদীর মুখে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন জানান, বর্ষা শুরু হওয়ায় এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন কবলিত এলাকায় ফসলি জমি, গাছপালা, বাড়িঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজস্ব খাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পদ্মার ডান তীরের নড়িয়া কৃর্ত্তিনাশা নদীর মুখ মাহিপাড়া ২২০ মিটার ও মূলফৎগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন পদ্মার পাড় ২১০ মিটার মোট ৪৩০ মিটার এলাকায় ৬৫ হাজার অপচনশীল জিও ব্যাগ ভর্তি করে বালি ফেলা হবে। এর দ্বারা কিছুটা হলেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
মাদারীপুর
পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের লৌহজং টার্নিংয়ে তীব্র ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হয়ে ফেরিসহ নৌযান চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। স্রোতের গতিবেগের সঙ্গে উজানে নদী ভাঙনের পলি পড়ে সৃষ্টি হয়েছে নাব্যতা সংকট। পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার বিকেলে বিকল্প ওয়ান ওয়ে চ্যানেল চালু হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেটা অব্যাহত থাকবে। এতে নৌপথের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার বেড়ে পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে।
বিআইডব্লিউটিসিসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির গতিবেগ বাড়তে থাকে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে স্রোতের গতিবেগ তীব্র আকার ধারণ করে।
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, নদীতে তীব্র স্রোত। বিশেষ করে লৌহজং টার্নিংয়ে ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হওয়ায় এটি ক্রস করতে ফেরিগুলোকে হিমশিম খেতে হতো। তাই বিকল্প চ্যানেল চালু করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ
মেঘনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি পারাপারের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে এই নৌরুটে ফেরি পারাপার ব্যহত হচ্ছে। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে সদ্য চালু হওয়া মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিসের মেঘনা নদীর দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুন্সীগঞ্জ প্রান্তের চরকিশোরগঞ্জ ঘাট ও গজারিয়া প্রান্তে গজারিয়া ঘাটের দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিসে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করছে ফেরি স্বর্ণচাঁপা। ৫টি ট্রাক কিংবা ৬টি যাত্রীবাহী বাস ধারণ ক্ষমতার এই ফেরিটি প্রতিদিন মেঘনা পাড়ি দিয়ে যাচ্ছে এই নৌরুটে। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নৌরুটে ফেরি সার্ভিসের দুই পাড়ের ঘাট এলাকার অ্যাপ্রোচ সড়ক প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে করে ঘাটের উভয় পাড়ে যানবাহন ও যাত্রীদের ফেরিতে উঠানামায় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার দু’পাড়েই পাল্লা দিয়ে চলছে নদী ভাঙন। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নদী ভাঙনে গত এক মাসে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বহু ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
জানা যায়, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন চলছে। প্রতিনিয়তই নদীর পেটে যাচ্ছে বসত বাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দোকান পাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গত রোববারও (৮ জুলাই) খাষপুখুরিয়া ও চরছলিমাবদ এলাকায় ৭টি বসতবাড়ি যমুনার পেটে গেছে।
এছাড়া যমুনার পশ্চিম তীরে অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যায়ের দক্ষিণে সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়েও চলছে যমুনা ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডবলীলা।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব:) আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে যমুনার ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এখনই ভাঙন ঠেকানো না গেলে চৌহালীর বাকি অংশ মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকবে না।
ভিডিও