আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর সবচেয়ে কম খরচে পড়ালেখা শেখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেমিস্টারের টাকা দিতে না পারায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের।
বুধবার জাতীয় সংসদে আসন্ন বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি। বাংলাদেশে পড়ালেখার খরচ খুবই কম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার ছেলেমেয়েদের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, অক্সফোর্ডে চান্স পেয়েছিল কিন্তু তার বাবার সেই সঙ্গতি ছিল না সেখানে পড়ার খরচ দেয়ার। তিনি কিন্তু ভর্তি হতে পারেননি। এটা হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেছে চাকরি করেছে। আবার একটা গ্যাপ দিয়েছে তারপর পড়েছে। ছাত্রলোন নিয়েছে, সেটা শোধ দিয়েছে আবার ভর্তি হয়েছে মাস্টার ডিগ্রি করেছে। আবার সেই লোন শোধ দিয়েছে এভাবেই তারা পড়ালেখা করেছে। পড়াশোনা করার অবস্থায় কিন্তু ঘণ্টা হিসেবে তারা কাজ করত। সেটা দিয়ে তাদের চলত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি দুঃখের বিষয় আমার ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় এমআইটিতে চান্স পাওয়ার পর আমি তার শিক্ষার খরচটা দিতে পারিনি। দুইটা সেমিস্টার পড়ার পরে নিজে কিছু করল আমাদের কিছু বন্ধু-বান্ধব তারা কিছু সহযোগিতা করল আর আমার আব্বার বন্ধু আজিজ সাত্তার সাহেব কাকাই কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি না হলে বোধহয় আমি পড়াতে পারতাম না। তারপরও তারা মিশনারি স্কুলে পড়েছে। মিশনারি স্কুলে ৭ দিনের মধ্যে ৬ দিন সবজি আর ডাল খেতে হতো। একদিন হয়তো মাংস ছিল। এভাবে কৃচ্ছতা সাধন করেই কিন্তু তারা বড় হয়েছে এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য নিজেরাই ….।
তিনি বলেন, যখন এমআইটিতে দিতে পারলাম না, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী, আমি কাকে বলব টাকা দিতে? বা আমিই কীভাবে টাকা পাঠাব? আমার নিজের কারণেই তারা পড়া হলো না। দুটি সেমিস্টার পড়েই তাকে বিদায় নিতে হলো। তবে সে চাকরিতে ঢুকল। ২০০৭ সালে আমি যখন আমার বউমা অসুস্থ আমি গেলাম তখন আমি তাকে অনুরোধ করলাম। কারণ আমার ভেতরে এই বিষয়টা সব সময় কষ্ট লাগত। আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও তার জন্য টাকা সংগ্রহ করতে পারিনি। কার কাছে চেয়ে, কার কাছে আমি দেনা থাকব! সেটা আমার পক্ষে সম্ভব না। এরপর সে চাকরি করে, বউমা চাকরি করে তখন আমি বললাম আবার তুমি অ্যাপ্লাই কর। সে বলল, মা অনেক কষ্ট, অনেক সময় লাগে। আমি অনেক অনুরোধ করার পর সত্যিই সে আবেদন করল। সে চান্স পেয়ে গেল। আমি কথা দিয়েছিলাম প্রথম সেমিস্টারের টাকা আমি দেব কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি অ্যারেস্ট হয়ে গেলাম। তবে আমি বলে গিয়েছিলাম যেভাবেই হোক পড়ালেখা যেন চালায়। পরে সে কলেজ থেকে দূরে বাসা ভাড়া নিল সস্তায় বাসা পাবে বলে। সেখান থেকে বাইকে করে কলেজে যেত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাইরের পড়ালেখাটা কত খরচের। রেহানার মেয়ে অক্সফোর্ডে চান্স পাইছে সে স্টুডেন্ড লোন নিয়ে পড়ালেখা করেছে। তারপর চাকরি করে সেই লোন শোধ দেয়। একুশ বছর বয়স থেকে চাকরি করছে সে। তারপর মাস্টার ডিগ্রি করল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে প্রায় বিনাপয়সায় আমরা ছাত্রদের পড়াই। তারপরও যদি তারা রাস্তায় নামে, ভিসির বাড়ি ভাঙচুর করে, লুটপাট করে- এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নাই। সেজন্য আমরা কোটা পদ্ধতি বাদ দিয়েছি। এরপর মফস্বলের কেউ চাকরি না পায়, তার জন্য অত্যন্ত আমাদের দায়ী করতে পারবে না।