সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘সপ্তাহের ৫/৭ দিন যাবত সারাদেশ ঘুরে যতটা অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, বিগত ৪৭ বছরে এত একটা শান্ত ও পিসফুল পরিবেশ দেখিনি। আমি ভোটারদের বলবো, আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন। আপনার ভোটটা দেবেন। আমরা আশেপাশেই থাকবো।’
শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টার ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আমি বিভিন্ন ডিভিশন ভিজিট করেছি। বিভিন্ন জেলায় গিয়েছিলাম। প্রত্যেকটি জায়গায় গিয়েছিলাম যেখানে উপস্থিত ছিলেন ডিভিশনাল কমিশনার, ডিআইজি এসপি, ডিসি, কোথাও কোথাও রিটার্নিং কর্মকর্তারা ছিলেন। বিজিবি-র্যাব কর্মকর্তারাও ছিলেন। সেনাবাহিনী সদস্যরা ছিলেন। তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছি।
আমি সেনাপ্রধান হিসেবে বলব, চমৎকার পরিবেশ যেটা বিশেষ করে ঢাকার বাইরে দেখে এসেছি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিজিট করেছি। সেখানে অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশ দেখেছি। সবাই আশ্বস্ত করেছে। যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবার ইনশাল্লাহ নির্বাচন হবে। কোনো থ্রেট আছে কি-না তা সবার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি। যাতে করে সেনাবাহিনী দিয়ে সেখানে যে ঝুঁকি বা বিপদের বা ভয়ের আশঙ্কা আছে তা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি। সবাই আশ্বস্ত করেছে। কিছু কিছু যেমন বর্ডারিং এলাকাগুলোর সম্পর্কে কথা বলেছেন। আমি সেনাবাহিনীর টহল সেই এলাকাগুলোতে বৃদ্ধির করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে ওই জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সেনাপ্রধান বলেন, সারাদেশে যেগুলো সংখ্যালঘু এরিয়া আছে, প্রত্যেকটি এরিয়াতে সেনাবাহিনী বিশেষ করে নিজেরা গিয়ে তাদের যেন আশ্বস্ত করে। তারা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে যাতে আসতে পারে। যার যার ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারে সে আশ্বাস প্রদানের জন্য আমাদের সেনাবাহিনীর টহলগুলো ওই এলাকাগুলোতে যাচ্ছে। আজকেও যাবে। নির্বাচনের পরেও তাদেরকে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যখনি নির্বাচনে যারা হেরে যায় তারা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করে। এ ব্যাপারে আমরা অনেক সতর্ক থাকব।
সেনাপ্রধান হিসেবে বলব, আমিও এই দেশের নাগরিক। তারপরেও আমি এই সপ্তাহের গত ৫/৭ দিন যাবত সারাদেশ ঘুরে যতটা অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, বিগত ৪৭ বছরে এত একটা শান্ত ও পিসফুল পরিবেশ আমরা দেখিনি। নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি এমন সময়ে বিগত বছরগুলোতে কিছু না কিছু সহিংসতা ঘটেছে। এবারও যে একদম হয়নি তা না। কিন্তু তা এবার খুবই কম।
আমরা টিম ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছি। আর্মি, পুলিশ বিজিবি র্যাব, প্রশাসন, আনসার সবাই একটা টিম হিসেবে একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবো। আমরা কোনো ধরনের সংঘাত, কারও মধ্যে ভয়ভীতি দেখাবে এগুলো যাতে কেউ ঘটাতে না পারে আমরা অত্যন্ত সতর্ক থাকব। আজ থেকে আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। এতদিন আমরা যেটা করেছি এখন থেকে আরও হবে। জনগণের মধ্যে যেন ভয়ভীতি তৈরি না হয়, সেই আস্থাটা দিতে পারি সেজন্য পেট্রলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেব। অন্যান্য সংখ্যার জিনিসও বাড়িয়ে দেব। দিন শেষে আমরা যেটা চাই যে, সুন্দর একটা নির্বাচন সম্পন্ন হোক।
ভোটাররা যেন নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে আপনারা সেটাই করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি বিশেষ করে ঢাকার বাইরের ভোটারদের। এলাকা ভাগ করে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি, কোথাও পুলিশ, কোথাও র্যাব, কোথাও বিজিবি সেনাবাহিনী যাচ্ছে।
যেহেতু অনগ্রাউন্ড পুলিশের পরই সেনাবাহিনীর সংখ্যা আছে। সারাদেশে আমাদের ৫০ হাজারের উপরে সেনা সদস্য মোতায়েন আছে। তারা কনটিনিউয়াস টহল দিচ্ছে। প্রত্যেকটা ক্যান্টনমেন্টে পর্যাপ্ত সেনা সদস্যদেরকে স্ট্যান্ডবাই রেখেছি। আজকে থেকে বিভিন্ন জায়গায় যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে যেন স্বল্প সময়ে পাঠাতে পারি সেজন্য গতকাল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ভোটারদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য না, ভোটারদের জন্য বলবো, আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন। আপনার ভোটটা দেবেন। আমরা আশেপাশেই থাকবো। শুধু আমরাই না, অন্যান্য ল ইনফোর্স এজেন্সির সাথে সমন্বয় করে আশেপাশেই থাকবো। নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো, কেউ কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে। আমরা নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করবো। (জাগো নিউজ)
বার্তা কক্ষ
২৯ ডিসেম্বর,২০১৮