মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেনো গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এমন গজলের কথার রেশ ধরেই বলতে হচ্ছে, এমন চোখ জুড়ানো দৃষ্টি নন্দন মসজিদ দেখলেই ইসলাম ধর্মের যে কোন ধার্মিক ব্যক্তিরই মসজিদের পাশে কবর দেয়ার ইচ্ছে জেগে ওঠবে।
নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে সিআইপির রাস্তা, তার পাশেই চোখ জুড়ানো নকশায় মোড়ানো একটি গুম্বুজ ও একটি মিনার নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মনমুগ্ধকর কারুকার্যময় এমন মসজিদ প্রথম দেখাতেই আটকে যাবে যে কারো অপলক দৃষ্টি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নং লক্ষ¥ীপুর মডেল ইউনিয়নের পূর্ব রামদাসদী গ্রামে অবস্থিত তাকওয়া জামে মসজিদটি যে কেউ দেখে আসতে পারেন এমন দৃস্টিনন্দন দৃশ্য। যে মসজিদটি ভেতর-বাহিরে নানা রকমের নঁকশায় মোড়ানো রয়েছে।
অনন্য কারুকার্যে নির্মিত এ দৃষ্টি নন্দন মসজিদটি জেলার অন্যান্য মসজিদ থেকে একটু ব্যাতিক্রম। মসজিদের সুসজ্জিত পরিবেশ আর নানা রকমের ডিজাইন দেখলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। সুসজ্জিত মসজিদটি নির্মিত হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার পূর্ব রামদাসদী গ্রামে।
মসজিদটি এক পলক দেখতে গিয়ে দেখা যায়, রামদাসদী ওয়াপদা রাস্তার পাশে একটি গুম্বুজ ও একটি মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদটি। মসজিদটির মূল ফটকটি আঁকাবাঁকা নকশায় মোড়ানো। প্রত্যেকটি জানালার গ্রীল আরো নিখুঁতভাবে নকশায় মোড়ানো হয়েছে।
ভেতরে ঢুকতেই আরো বেশি চোখ জুড়িয়ে যায়। মসজিদের বারান্দায় এবং ভেতরের সিলিংয়ে রয়েছে আঁকাবাঁকা আর ফুলের নকশা। মেঝেতে ও দেয়াল জুড়ে টাইলস এবং মার্বেল দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো রয়েছে। রয়েছে ৪টি এয়ার কন্ডিশন।
মাঝপ্রান্তে গুম্বুজের ভেতর উপরে টানানো রয়েছে বিশাল এক ঝাড়বাতি। দেখলে মনে হয় কোন রাজপ্রসাদ। এছাড়াও জুমার খুতবা পড়ার জন্য ইমামের স্থানটিও খুব গর্জিয়েছ ভাবে করা হয়েছে। মসজিদের চারপাশে উন্নত পরিসরে সাজানো রয়েছে মুসল্লিদের জুতা রাখার বক্স।
মসজিদের পাশাপাশি একই স্থানে রয়েছে, দ্বীনি শিক্ষার জন্য মরহুম আব্দুস ছাত্তার কমপ্লেক্স দারুল আরকাম নামে একটি মাদরাসা। আর ওই মাদরাসায় বর্তমানে ১,শ, ৩০ জন শিক্ষার্থী দ্বীনি শিক্ষা গ্রহন করছেন। মাদরাসাটি পরিচালনা করছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইমরান।
তিনি জানান, ওই এলাকার কাতার প্রবাসী তিন ভাই মিলে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এই মসজিদ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আর ওই তিন ভাই হচ্ছেন বর্তমান মসজিদ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাজী মিজানুর রহমান মাঝি, সাধারণ সম্পাদক হাজী এমরান হোসেন মাঝি ও সদস্য ইকবাল হোসেন মাঝি। আর এই তিন ভাইয়ের উদ্যোগেই রামদাসদী তাকওয়া জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি আরো জানান, ২০১৫ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ মসজিদটি নির্মান করা হয়। দিনাজপুর জেলার নির্মান ও নকশা শ্রমিকরা প্রায় ৪ বছর ধরে এর নির্মান কাজ করেন। আর মাদরাসাটি নির্মান করা হয় ২০১৬ সালে। মসজিদের ভেতরে বিশাল যে ঝাড়বাতিটি রয়েছে সেটি সাড়ে ৪ লাখ টাকায় কাতার থেকে ক্রয় করে আনা হয়েছে।
মসজিদের ভেতরে বিভিন্নস্থানে আরো বেশ কিছু ঝাড়বাতি রয়েছে। সন্ধায় সেই ঝাড়বাতির রঙ্গিন আলোয় নানা রকমের নকশায় মোড়ানো তাকওয়া জামে মসজিদটি আরো আলোকিত হয়ে উঠে।
এ ছাড়াও মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি পারিবারিক ও একটি গণকবরস্থান। পাশেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জন্যে রয়েছে বিশ্রামাগার।
প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি