Home / শীর্ষ সংবাদ / ফরিদগঞ্জে অপরাধ জগতে যেভাবে উত্থান হয়েছিলো লাল বাদশার
ফরিদগঞ্জে অপরাধ জগতে যেভাবে উত্থান হয়েছিলো লাল বাদশার

ফরিদগঞ্জে অপরাধ জগতে যেভাবে উত্থান হয়েছিলো লাল বাদশার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় লাল বাদশা ছিলেন একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, রবিবার (২৭ মে) দিবাগত রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

নিহত আবু সাঈদ ওরুফে বাদশা মিয়া ওরুফে লাল বাদশা উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ ছৈয়ালের ছেলে। এক এক স্থানে তিনি এক এক নামে পরিচিত ছিলেন।

লাল বাদশা এক সময় রাজধানী ঢাকার মোস্ট ওয়ানটেড শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। বিএনপি-জামাতের সময় অপারেশন ক্লিনহাটে পিচ্চি হান্নান নিহত হলে বাদশা আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি কয়েক বছর পূর্বে গ্রামের বাড়িতে এসে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে আবারো আলোচনায় আসেন।

কিভাবে উত্থান হয় এই শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীর। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভাবের তাড়নায় ১৫ বছর বয়সে নিজ গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। কারওয়ান বাজারে একটি কাঁচামালের দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ শুরু করেন।

পরবর্তীতে কারওয়ান বাজারে নিজে একটি কাঁচামালের দোকান। ওই স্থানে কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পরিচয় ঘটে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের সাথে। পিচ্চি হান্নানের গ্রামের পৈত্রিক বাড়িও ছিলো ফরিদগঞ্জে। পিচ্চি হান্নানের সাথে পরিচয় হওয়ার পর ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের লোকজনের সাথে পরিচয় ঘটে লাল বাদশার। কারওয়ান বাজারে বাদশা নামেই পরিচিতি লাভ করেন তিনি।

কাঁচামালের ব্যবসার পাশাপাশি বেকারী ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা ও কুমিল্লাতে ছিলো তার এই বেকারীর ব্যবসা। এই বেকারী ব্যবসার আড়ালে চলত তার মাদক সম্রাজ্য। এর সাথে পাল্লা দিয়ে তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার ব্যাপক অভিযোগ। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাতের সময় অপারেশন ক্লিনহাটে পিচ্চি হান্নান নিহত হলে বাদশা আত্মগোপনে চলে যান।

দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি কয়েক বছর পূর্বে গ্রামের বাড়ি ১০নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে অবস্থান নেয়। এখানেও সে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রামে ১টি, চাঁদপুরে ২টি ও ফরিদগঞ্জে ৭টি মামলা হয়।

অত্যন্ত চতুর ও দুর্ধষ সন্ত্রাসী বাদশা মিয়া সুকৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারসে এলাকায় মাদক বিক্রি করতো। এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিলো সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসাবে জায়গা দখল ছাড়াও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত ছিলো। এই মাদক সম্রাট নির্দিষ্ট কোন স্থানেই দীর্ঘক্ষন অবস্থান করত না।

এছাড়া পুলিশ যাতে তাকে আটক করতে না পারে সে জন্যে সোর্সদের নিয়মিত মাসোহারা দিতো। বাদশা মিয়া লাল রং বেশি পছন্দ করতো বিদায় এলাকার সবাই তাকে লাল বাদশা নামে ডাকতো। এলাকাবাসীর বক্তব্য অধিকাংশ সময় সে লাল রংয়ের বস্ত্র পরিধান করতো।

থানা সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৭ সালের ১২ জুন রাতে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ আলমের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ তার বাড়ির নিকট অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে বাড়ির রান্না ঘরে পাওয়া যায়।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে লাল বাদশা দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে পাশ্ববর্তী ডোবাতে ঝাঁপ দেয়। এলাকাবাসীর সহযোগীতায় তখন তাকে আটক করা হয়। ১১ মাস জেল খাটার পর গত দেড় মাস পূর্বে লাল বাদশা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আবারো মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে বলে দাবী পুলিশের।

সর্বশেষ প্রাধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াসি অভিযান শুরু করেন। অভিযানে রোববার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের বৈচাতরী এলাকায় আলোচিত এই মাদক ব্যবসায়ী ক্রসফায়ারে নিহত হয়।

প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ

Leave a Reply