মসজিদের ভিতরে রাতের তারাবি নামাজ আদায় করে নমাজিরা। আর তাঁদের মোবাইল থেকে মোটর সাইকেল-সহ দামি সামগ্রী মসজিদের বাইরে পাহারা দেন এক হিন্দু যুবক৷ রেলকর্মী অমিতকুমার প্রসাদ নিজের ডিউটি শেষে সারা রমজান মাস জুড়ে স্বেচ্ছায় এই মসজিদ পাহারাকে নিজের সেবা বলে মনে করেন৷
রামপুরহাট থানা ঢোকার আগেই রামপুরহাট শহরের বড় জামে মসজিদ। পবিত্র রমজান মাসে রোজার তারাবির সময় মসজিদে ভিড় বাড়ে। সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। কয়েক বছর আগেও নমাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে নমাজিদের সাইকেল, মোটর সাইকেল চুরি যেত বলে অভিযোগ।
খবর পেতেই গত কয়েক বছর ধরে মসজিদের বাইরে নমাজিদের রেখে যাওয়া সামগ্রী পাহারায় এগিয়ে আসেন অমিত কুমার। মসজিদের ইমাম সাহেব থেকে মসজিদ কমিটির সদস্য এবং নমাজিরা সেই কৃতিত্বের পুরোভাগটাই দিচ্ছেন একজন হিন্দুকে। গোটা দেশে অসহিষ্ণুতার দিনে রামপুরহাটে এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির শহরে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
অমিতকুমার প্রসাদ রেলকর্মী। তাঁর বাড়ি রামপুরহাট বাজারপাড়ায়। মসজিদ থেকে সামগ্রী চুরির খবর পেয়ে অবিবাহিত এই যুবক স্বেচ্ছায় মসজিদ কমিটির সঙ্গে দেখা করেন। নমাজিদের সাহায্যের উদ্দেশে তিনি এগিয়ে আসেন।
লাজুক হাসিতে অমিতবাবু মন্তব্য, ‘‘নমাজিরা যাতে নিশ্চিন্তে ধর্মাচরণ করতে পারেন, সেজন্য আমি রাতের নমাজের সময় রাত আটটায় চলে আসি। থাকি রাত ১০টা পর্যন্ত। সে সময় মসজিদে আসা নমাজিদের সাইকেল, মোটর সাইকেল, তাঁদের রেখে যাওয়া মোবাইল ও অন্য সামগ্রী পাহারা দিই৷ রেলে আমার দিনে ডিউটি। রাতে আমার কাজ থাকে না। তাই নিজেই এই সেবার কাজে লেগে পড়েছি। অন্য ধর্মের পাহারাদার হয়ে একমাস পালন করা আমার কাছে কিছুটা পুণ্যের লোভে বলতে পারেন।
মসজিদের ইমাম জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এই মসজিদে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ নমাজি রমজান মাসে আসেন। প্রথমে ফরজের নমাজ পড়া হয়। পরে পবিত্র কোরান পাঠ হয়। যাকে আমরা তরাবি বলি। বাইরে মন পড়ে থাকলে উপলব্ধির কথা কিছু শোনা হবে না।
তাই নমাজে অংশগ্রহণকারীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে ধর্মাচরণ করতে পারেন, তার জন্য অমিতকুমার প্রসাদ স্বেচ্ছায় ওই সময় মসজিদে পাহারা দেন। তার বিনিময়ে তিনি কিছু নেন না। এই কাজ তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে করে যাচ্ছেন। তাঁর এই কাজের জন্য যে কোনও প্রশংসা কম৷ বরং ওর এই সুস্থ ভাবনার জন্য তাকে সুস্থ রাখার জন্য আমরা দোয়া করি৷’’