রাজধানীর বনানী গোরস্থানে বাবার কবরেই শায়িত হবেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। মঙ্গলবার রাত সোয়া দশটার দিকে চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাজিন আহমেদের ফুফু ও অভিনেত্রী দিলারা জামান।
যোহরের নামাজের পর অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে জানিয়ে দিলারা জামান বলেন: আজকে সারারাত উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের সামনে ফ্রিজিং করা গাড়িতেই তাজিন আহমেদের মৃতদেহ রাখা হবে। বুধবার যোহরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে তার নামাজে জানাজার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর আমার ছোট ভাই, মানে তাজিনের বাবার কবরেই তাকে দাফন করা হবে। সেখানে তার পাশে আমার বাবা, মায়েরও পার্মানেন্ট কবর।
সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে এই অভিনেত্রী আরো বলেন: অনেক কষ্ট, অভিমান নিয়ে মেয়েটা চলে গেলো। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেনো তাকে পরপাড়ে শান্তি দেন।(বলতে বলতে চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি ছোট ও বড় পর্দার তুখোড় অভিনেত্রী দিলারা জামান)।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উত্তরার বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাজিন আহমেদ। এরপর তাকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। সেখানে কয়েক ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে রাখার পর তাজিন আহমেদ বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাজিনের শেষ পোস্টে কী ছিল?
‘ভালো লাগা মুহূর্তগুলো সব সময় স্মৃতি হয়ে যায়…’—সোমবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে এটি পোস্ট করেছিলেন অভিনয়শিল্পী ও উপস্থাপক তাজিন আহমেদ। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি নিজেই সবার কাছে স্মৃতি হয়ে গেলেন। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাজিন আহমেদের আচমকা মৃত্যুর সংবাদে নাট্যাঙ্গনের বন্ধু-সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফেসবুকে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে আহাজারি করেছেন। সহকর্মীকে নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া কিছু পোস্ট তুলে ধরা হলো—
শিমূল ইউসুফ—‘আহা, ছোট বোনটি আমার। হে আল্লাহ তুমি তাজিনকে তোমার কোলে আশ্রয় দাও, আমিন।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ‘হোয়াট অ্যা স্যাড নিউজ টু হিয়ার। হোপ ইউ ফাইন্ড দ্য পিস ইউ হ্যাভ বিন লুকিং ফর, তাজিন আহমেদ।’
তুষার খান, ‘তাজিন, এ কী হলো, আল্লাহ তুমি তাকে বেহেশতবাসী কোরো।’
চঞ্চল চৌধুরী, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না। নিয়তি এভাবে তোমাকে টেনে নিয়ে গেল! ভালো থেকো তাজিন আপু। আর কখনো দেখা হবে না। সব এখন স্মৃতি। ভালো থেকো ওপারে।’
শাহনাজ খুশি, ‘তাজিন! কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না! এমন করে সব শেষ হয়ে গেল? এই তো সেদিন, সর্বশেষ বিদেশিপাড়ার শুটিং সেটে সারা দিন কত কথা হলো! আমি মনোযোগ দিয়ে শুনেছি তোর সব কথা। মনের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে অনেক কষ্ট করেছিস শেষ দিনগুলো, যেখানে গেলি, সেখানে যেন শান্তি হয়।’
রিচি সোলায়মান, ‘এটা কী হলো, তাজিন আপু। এভাবে চলে গেলা!’
অনিমেষ আইচ, ‘মরে গেলেই আহা…উহু! বেঁচে থাকতে কেউ পুছে না। ঈদনাটক মানেই সব টাকা দিয়ে একটা মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, অপূর্ব এবং স্টার কাস্ট কিনতে হবে। মরে গিয়ে বেঁচে গেলেন তাজিন। একজন শিল্পীর অপমৃত্যুর জন্য আমরাই দায়ী। সামনে অকালমৃত্যুর দীর্ঘ সারি।’
মাসুদ হাসান উজ্জ্বল, ‘এইটা কী শুনলাম!’
প্রীতম আহমেদ, ‘ঘুম থেকে উঠে নিউজফিডে অনেকের পোস্টে জানলাম তাজিন আর নেই। অনেক দিন আগের শেষ মেসেজে ও লিখেছিল, কিপ ইন টাচ বন্ধু। সন্ধ্যার আকাশটা আজ রক্তরাঙা। মনে হচ্ছে, একটা মেয়ের হৃৎপিণ্ড কান্না চেপে রাখতে রাখতে বিকল হয়ে গেল।’
জাকিয়া বারী মম, ‘সত্যি ই তাজিন আপু, ভালো লাগা মুহূর্তগুলো সব সময় স্মৃতি হয়ে যায়।’
মাসুদ সেজান, ‘এই তো সেদিন, কী জীবন্ত ছবি। আহা, আমাদের যৎসামান্য জীবন! তাজিন, তোমার এই অকস্মাৎ মৃত্যুতে আমি এতটা অবাক হয়েছি, কত কিছুই বলার আছে, অথচ আমি নির্বাক। যেখানেই যাও, এবার একটু ভালো থাকো।’
রুমানা, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুক খুলে যে সংবাদটা জানতে পারলাম, তা বিশ্বাস করতে মন চাইছে না। তাজিন আপু নেই! এটা কি তাঁর চলে যাওয়ার বয়স বা সময়!’
হাসান মাসুদ, ‘চলে গেলেন? বলে গেলেন না, শান্তিতে থাকুক আপনার আত্মা!’
আলিফ আলাউদ্দিন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না!’
সাদিয়া জাহান প্রভা, ‘এইবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাও তাজিন আপু, অনেক তো বেঁচে থাকার লড়াই হলো।’
কোনাল, ‘ভালো থেকো তাজিন আপু। এই পৃথিবী তোমাকে শান্তি দিতে পারেনি। ওপারে বেহেশতের বাগান আল্লাহ তাআয়ালা তোমাকে যেন দেন। আমিন।’
মৌটুসী বিশ্বাস, ‘বহুদিন ধরে ভালো থাকার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন আপা। যুদ্ধ শেষ।’
আরমান খান, ‘তাজিন আহমেদ, অবিশ্বাস্য’
শানারৈই দেবী শানু, ‘এত সহজ চলে যাওয়া? এত সহজ মরে যাওয়া? সবাইকে ভাসিয়ে দিয়ে, মহাশূন্যে ভেসে যাওয়া? ভাষা পাচ্ছি না। মানুষগুলো এমনই চলে যাবে, হারিয়ে যাবে একদিন। যেখানেই থাকো, ভালো থাকো তাজিন আহমেদ আপু। জানি তোমাকে ট্যাগ করেও কোনো লাভ নেই আর, কোনো কমেন্ট রিপ্লাই আসবে না। ভালো থেকো পরপারে সমস্ত কষ্টের ঊর্ধ্বে।’
আয়শা মনিকা, ‘পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে বেঁচেছিলে তুমি। আল্লাহ তোমাকে যেন অনেক শান্তিতে রাখেন (আমিন)। ভালোবাসি তোমাকে তাজিন আপু।’
মৌসুমী হামিদ, ‘একটু আগে যখন তোমার গালে হাত বুলাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল তুমি জেগে উঠবা। বলবা সরে যা, ঘুমাইতে দে। শুটিংয়ে তো যখন ঘুমাইতা, উঠে যাইতা, এখন তো উঠ না আপু। তোমার নরম গালে শেষবারের মতো হাত বুলালাম, বিশ্বাস হচ্ছে না। এত কষ্ট মনে নিয়ে চলে যাওয়া উচিত হয় নাই তাজিন আপু। হাঁসের মাংস খাইতে পারলাম না, ভালো থাকো, যেখানেই থাকো।’
ঐন্দ্রিলা আহমেদ, ‘আহা তাজিন আপু, এভাবে চলে গেলেন? আর পারলেন না, তাই না? আর পারা গেল না?’
রুনা খান, ‘আপু…আহারে তাজিন আপু! এবার শান্তি হোক, আত্মার শান্তি হোক।’
ইরফান সাজ্জাদ, ‘একটা বড় বোন হারালাম! স্যরি আপু! ছিলাম না পাশে! ধন্যবাদ তোমার স্বার্থহীন ভালোবাসার জন্য।’
নির্ঝর চৌধুরী, ‘তাজিন আপু! ভাবতেই পারছি না। এমন একটা খবর শুনব একটু আগে কল্পনারও বাইরে ছিল। তোমার মতো এত মিষ্টি হাসি আর কারও মুখে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। শেষের দিনগুলো তোমার খুব একটা ভালো কাটছিল না। তোমার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে বুঝতে পারতাম। কঠোর জীবনসংগ্রামের ব্যস্ততায় তোমার স্ট্যাটাস দেখেই হয়তো পর মুহূর্তে ভুলে গেছি। রেডিও ৭১-এ কাজ করতে আসার সুবাদে তোমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। তোমার চলে যাওয়ার সংবাদটাও সেখান থেকেই প্রথম পেলাম! যেখানেই যাও, ভালো থেকো আপু। খুব, খুব ভালো।’