সিএনজিতে উঠেই মনে হলো ভুল করে কোনো ড্রেসিং রুমে ঢুকে পড়েছি। মুহূর্তের মধ্যেই মনে হলো না, এটা হয়তো কোনো ড্রয়িং রুম। কিন্তু এতেও যেন মনে খুঁতখুঁত থামলো না। পরক্ষণে মনে হলো কোনো ছাদ বাগানে উঠে পড়েছি। ভালোভাবে এদিক-ওদিক চোখ মেলানোর পর সেটা ভেবেও আর মনকে তৃপ্তি দিতে পারলাম না। স্থান নিয়ে এই টানাপোড়েনের উপযুক্ত কারণও রয়েছে। এর আগে, যে সব বৃক্ষবেষ্টিত সিএনজির কথা শুনেছি বা দেখেছি, সেগুলোর বেশিরভাগই জোর দেওয়া হয়েছে গাছ-গাছালির উপর। কিন্তু কি নেই এই সিএনজিতে। ছাদের উপর নজরকাড়া গাছ, ভেতরে দামি কাপড়ে মোড়ানো সিট, এর ওপর কুশন, সেই সঙ্গে দুই পাশে আকর্ষণীয় পর্দা ঝুলানো। রয়েছে আয়না, চিরুনি, পানির ফিল্টার, অগ্নি-নির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার ও মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা।
এতেই ক্ষ্যান্ত হননি গাড়িটির চালক। জরুরি মুহূর্তে কারও নাম-ঠিকানা লিখে রাখতে কলম, প্যাড ও স্ট্যাপলারও দেখা গেল একটি বক্সে। রয়েছে টিস্যু বক্স, ম্যাচলাইট এবং নেইল কাটার। এছাড়া গাড়িচালক যেখানে বসেছেন তার পাশেই একটি পাতাবাহারের টব এবং টুকটাক শো-পিস রয়েছে। এরই মাঝে উপরের দিকে তাকালে দেখতে পেলাম সোলার লাইট।
তক্ষণ ধরে যে সিএনজির বর্ণনা দেওয়া হলো সেটার চালক তপন চন্দ্র ভৌমিক। জানতে চাইলাম, এতকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করেন কিভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকটা সৌখিনতার বশে এসব করে যাচ্ছি। লাভ-ক্ষতির হিসাব করি না।’ মুখে কথা শেষ না হতেই প্রশ্ন ছুড়লাম, বেশ কিছুদিন আগে টেলিভিশনে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে যে সিএনজিকে দেখানো হয়েছিল এটাই কি সেটাই? কিছুক্ষণ থেমে অনেকটা আক্ষেপের সুরে ভৌমিক বলেন, ‘না। ওই সিএনজিতে যা যা ছিল তার তিন গুণ জিনিসপত্র রয়েছে আমার গাড়িতে। হয়তো আমারই দুর্ভাগ্য, সেই ম্যাগাজিনে আমি যেতে পারিনি
পরিবারে আর কে কে আছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ঢাকার খিলগাঁওয়ে থাকি। রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করে। আর মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সন্তানরা চায় না আমি সিএনজি চালাই। কিন্তু এটাই আমার নেশা। গত ১০ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছি।’ এর আগে কি করতেন? এবার ভৌমিক বলেন, ‘পড়াশুনা খুব একটা করতে পারেনি। আমি স্বর্ণের কারিগর ছিলাম। চোখের একটা সমস্যার কারণে আর সেই পেশায় ফিরতে পারেনি। তাই এখন সিএনজি চালাই।
একটা প্রশ্ন বাকি ছিল, জিজ্ঞাসা করলাম-এতকিছু রয়েছে কিন্তু নেট চালানোর জন্য ওয়াই-ফাই কোথায়? জানালেন, ‘দুই-একদিনের মধ্যে গাড়িটি অ্যাপসভিত্তিক যাত্রীসেবায় যোগ দেবে। তখন থেকে ওয়াই-ফাই পাওয়া যাবে।’
সিএনজি থেকে নামার পর মনে হলো সিএনজি নয়, এ যেন গাড়ির ভেতর বাড়ি!