Home / আন্তর্জাতিক / প্রবাস / ‘এটি আমার শেষ ফোন কল, আমি আল্লাহর কাছে যাচ্ছি…’
'এটি আমার শেষ ফোন কল, আমি আল্লাহর কাছে যাচ্ছি...'

‘এটি আমার শেষ ফোন কল, আমি আল্লাহর কাছে যাচ্ছি…’

বিদ্রোহী দমনের নামে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে শোকে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরাও। অধ্যাপক রাফির লাশের পাশে দাঁড়িয়ে থেমে থেমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা যায় তাদেরকে।

দক্ষিণ কাশ্মিরে বিদ্রোহী দমনের নামে পরিচালিত অভিযানের সময়ে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৩৩ বছর বয়সী অধ্যাপক রাফি ভাট। কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চুক্তিভিত্তিক সহকারী অধ্যাপক ছিলেন তিনি।

কাশ্মির পুলিশের দাবি, রাফি কাশ্মিরের সবচেয়ে সক্রিয় স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনে যোগ দিয়েছিলেন। এ সংগঠনটিকে বিদ্রোহী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে কাশ্মির পুলিশ।

রাফি ভাটের বাড়ি মধ্য কাশ্মিরের গন্দেরবাল জেলার চুন্দিনা এলাকায়। রোববার সন্ধ্যায় হাজারো শোকাহত মানুষ তার বাড়িতে জড়ো হন। শিক্ষার্থীরাও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রিয় শিক্ষকের লাশ দেখার জন্য তার বাড়িতে অপেক্ষা করছিল।

একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা রাফির বুলেটবিদ্ধ লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। প্রতি ১০ মিনিট পরপর একেকজন শিক্ষার্থী তাকে দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।

গত শুক্রবার এ শিক্ষার্থীরাই প্রিয় শিক্ষক রাফিকে একটি হাতঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন। রাফি শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিলেন, তিনি হায়দারাবাদে অন্য একটি অ্যাসাইনমেন্টের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাচ্ছেন।

তবে তার এ যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে তা ভাবতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মালিক আবদুল মোমিন। রাফি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি যতটা না আমাদের শিক্ষক ছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি বন্ধু ছিলেন, পথপ্রদর্শক ছিলেন।’

মাস্টার্স ও এমফিল ডিগ্রিধারী রাফি ২০১৭ সালে পিএইচডি শেষ করেন। ডিগ্রি লাভের আগেই কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়াচ্ছিলেন রাফি ভাট। কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান পীরজাদা আমিনও রোববার রাফির জানাজায় অংশ নেন। তিনি কেবল রাফির সহকর্মীই নন, তার শিক্ষকও। পীরজাদা আমিন বলেন, ‘ও (রাফি) শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীই ছিল না, একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকও ছিল।’

শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শেষ দুটি লেকচার দিয়েছিলেন রাফি। এর একটি ছিল ভারতীয় সমাজ নিয়ে। আর আরেকটি ছিল পোস্ট-স্ট্রাকচারালিজম নিয়ে। ওই দিনই বেলা ৩টা ৬ মিনিটের দিকে ফেসবুকে একটি কবিতা পোস্ট করেন রাফি।

ওই কবিতাটি রাফিরই এক শিক্ষার্থী তাকে উৎসর্গ করেছিলেন। ওই কবিতা পোস্ট করতে গিয়ে রাফি লিখেছিলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। তোমাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কথা আমার মনে থাকবে। আল্লাহ তোমাদের সবাইকে ভালো রাখুন।’ ফেসবুক পোস্টটি দেয়ার ২৫ মিনিট পর নিখোঁজ হন রাফি ভাট।

শনিবার সকালে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায় তার পরিবার। রাফি ভাট অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। ভিসি প্রতিবাদীদের সাথে দেখা করে তাদের শান্ত করেন। আশ্বাস দেন, নিখোঁজ অধ্যাপককে খুঁজে বের করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে। পুলিশের ডিজিকেও এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলেন ভিসি।

রোববার সকালে ছেলের কাছ থেকে প্রথম ফোন কলটি পান রাফির বাবা ফায়াজ আহমদ ভাট। ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে রাফির কণ্ঠ- ‘যদি কষ্ট দিয়ে থাকি, দুঃখিত। এটি আমার শেষ ফোন কল। আমি আল্লাহর কাছে যাচ্ছি।’ এ দিনই ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে নিহত হন রাফি ভাট।

Leave a Reply