Home / চাঁদপুর / পাবলিক পরীক্ষার মতো খেলাধুলা-সংস্কৃতিতেও মাতৃপীঠের টানা সাফল্য
Matripith-high-school-chandpur

পাবলিক পরীক্ষার মতো খেলাধুলা-সংস্কৃতিতেও মাতৃপীঠের টানা সাফল্য

‘আমি শপথ করছি, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। দেশের প্রতি অনুগত থাকবো। অন্যায় দূর্নীতি করবোনা। একতা ও সংহতি বজায় রাখার সর্বদা সচেস্ট থাকবো।’

এমনই শপথ নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে জেলায় সর্বক্ষেত্রে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ৬০০ নারী শিক্ষার্থীর।

তার আগে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে সমবেত ভাবে স্কুল প্রাঙ্গনে মহান সৃস্টিকর্তাকে স্মরণ করে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠ শেষে দেশ ও মাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করে শিক্ষার্থীরা।

স্কুল আলমিরায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা ট্রফি ও স্কুল ইতিহাস থেকে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে গত কয়েক বছর ধরে সেরা পুরস্কার অর্জন করে আসছে। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, বিতর্ক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে প্রতি বছরই সেরা হওয়ার অবদান রেখে আসছে।

এর মধ্যে সৃজনশীল মেধা অন্নসন ২০১৭ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীতে এককভাবে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ও ২০১৮ সালে লোক সঙ্গীতে এককভাবে শ্রেষ্ঠ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

জেলা পর্যায়ে ক্রীড়া ক্ষেত্রে এবারের গ্রীস্মকালীন ক্রীড়া উৎসবে ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন ও গতবছর বাস্কেটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পাঞ্জেরি বির্তক ও পুষ্টি-প্রথম আলো বিতর্কেও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়া মহান স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবসসহ নানা দিবসে কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও অন্যান্য কর্মসূচিতে জেলায় সেরা হওয়ার গৌরব অব্যাহত রয়েছে।

Matripith-high-school

বিজয় উল্লাসে চাঁদপুর হাসান আলী মাতৃপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি : চাঁদপুর টাইমস

চাঁদপুরের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মো.সফিউদ্দিন জানান, সর্বক্ষেত্রে সেরা এবারও মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে সর্বোচ্চ ৭০জন জিপিএ-৫ পেয়ে জেলায় সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ২০১৬সালেও জেএসসিতে ১৪৯ জিপিএ-৫ পেয়ে সেরা হয়। তবে চতুর্থ বিষয় বাদ হওয়ায় ২০১৭ সালে ১০৩ জন জিপিএ-৫ পায়। এছাড়া পিইসি এবং এসএসসিতেও বরাবরই ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবার (২০১৮ সালে) জেএসসিতে ২৫৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৭০জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পিইসিতে ১২৪জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৩জন। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯৮ নাম্বার পেয়ে দুজন শিক্ষার্থীও জেলায় সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরেজমিন দুপুর ১২টায় গিয়ে দেখা যায় ঘণ্টি পড়ার সাথে সাথে সকালের (মর্নিং) শিফটের শিক্ষার্থীরা ক্লাশ শেষ করে বের হয়ে যাচ্ছে। প্রবেশ করছে দুপুরের(ডে) শিফটের শিক্ষার্থীরা। মাইকে ঘোষণার সাথে সাথেই সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে লাইনে। এরপর নিয়মিত এসেম্বলি ও শপথ পাঠ শেষে যার যার ক্লাশে চলে সবাই।

দুপুর দেড়টায় দিবা শাখার ৮ম শ্রেণির ক্লাশ নিচ্ছেলেন ইংরেজি শিক্ষক চাঁদ সুলতানা। তিনি শিক্ষার্থীদের গ্রামার থেকে ন্যারেশান পড়াচ্ছিলেন। তার অন্য পাশের ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে নবম শ্রেণির ক্লাশ নিচ্ছিলেন ফজলুল হক।

তিনি হাতে কলমে বোর্ডের সাহায্যে অংক করাচ্ছিলেন শিক্ষার্থীদের। মনোযোগ সহকারে শিক্ষার্থীরা তা বোঝার চেষ্টা করছিলো।

এই স্কুল থেকে এবারের জেএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান, ফাহমিদা খান, সুভানা আলম ও নাজিয়া হোসেন, তামান্না আক্তার ও উম্মে হাবিবাসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলে নিয়মিত আসার কারণে এবং শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদানের ফলে তারা এই স্কুল থেকে ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

আগামীতেও আরও ফলাফল করবে বলে তারা আশাবাদী। তবে ভালো ফলাফলের জন্য প্রাইভেট টিউটর ও বাসায় সন্ধ্যা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত পড়াশুনা করতো বলে জানায়।

এ স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক কল্পনা সরকার ও শাহজাহান সিদ্দিকী জানান, ভাল ফলাফলের প্রথম কারণ এখানে সবাই ভাল মানের শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যেক অভিভাবক ও শিক্ষকরাও শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস ও উপস্থিতি ভাল ফলাফল অর্জনে সব চেয়ে বড় ভুমিকা রাখছে। সব মিলে সমন্বিত প্রচেস্টার কারণে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছে।

চাঁদপুর শহরের একেবারেই মধ্যখানে লেকের পাড়ে প্রায় জায়গা নিয়ে ১৯২১ সালে গড়ে উঠা নতুন পুরাতন তিনটি ভবনে সেরা বিদ্যাপীঠটির কার্যক্রম চলছে। যদিও এটি ১৯৬৯ সালে সরকারি করণ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এই স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি উচ্চ মাধ্যমিকে রুপ নেয়।

শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে প্রতিবছরই ভাল ও সেরা হওয়ার কারণে মেয়েদের ভর্তি নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ শুরু হয়। কিছু মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পযায়ের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তদবিরে মাঝখান দিয়ে বেশ কয়েক বছর শিক্ষা কাযক্রম কিছটাু ব্যাহত হয়।

তবে পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে তদবিরবিহীন অনলাইন সিস্টেম আবেদন, অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দ্বারা ভর্তি পরীক্ষা, মেধা ভিত্তিক গোপনীয় পদ্ধতির প্রশ্ন পত্রের ব্যবহারের কারণে এই স্কুল সেরা শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বর্তমানে ভর্তির ক্ষেত্রে কার কোনো তদবিরই কাজ হয় না বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

২০১২ সালে যোগদানকৃত স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা জানান, ‘মাতৃপীঠ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কারণ পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় তার স্কুল বরাবরই জেলায় সেরা হয়ে আসছে। আর এ শ্রেষ্ঠত্ব তার স্কুলের বর্তমান ৪৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকার অবদান বলে স্বীকার করেন।

এটি তাঁরা ধরে রাখতে শিক্ষানীতি ও বর্তমান প্রযুক্তি সর্বোপরি স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণে হয়ে আসছে বলে দাবি করেন এ শিক্ষক। (আলম পলাশ, প্রথম আলো)

বার্তা কক্ষ
২০ জানুয়ারি, ২০১৯

Leave a Reply