বেলাল চৌধুরী একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাগারেও যান। বাংলাদেশের কাব্যসাহিত্যে তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।
কবিতা, গদ্য, অনুবাদ, সম্পাদনা, শিশুসাহিত্য মিলিয়ে তার গ্রন্থসংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। সম্পাদনা করেছেন দু’ বাংলার বেশ ক’টি স্বনামধন্য পত্রিকা। ভূষিত হয়েছেন একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারেও। ছিলেন বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো।
তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১২ নভেম্বর ফেনী জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত শর্শদি গ্রামে। তার বাবা রফিকউদ্দিন আহমাদ চৌধুরী ও মা মুনীর আখতার খাতুন চৌধুরানী। নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
ছাত্র অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন বাম ধারার রাজনীতিতে। ষাট ও সত্তরের দশকে ক’ বছর কলকাতায় বসবাসের সময় সাহিত্য পত্রিকা কৃত্তিবাস সম্পাদনায় যুক্ত হন কবি। পরে পল্লীবার্তা, সচিত্র সন্ধানী ও ভারত বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদনায় যুক্ত হন। ‘বল্লাল সেন’, ‘ময়ূর বাহন’, ‘সবুক্তগীন’ ছদ্মনামেও তিনি লিখেছেন।
তিনি দীর্ঘ সময় ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত ভারত বিচিত্রা পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘নিষাদ প্রদেশে’,‘আত্মপ্রতিকৃতি’,‘স্থির জীবন ও নিসর্গ’, ‘জলবিষুবের পূর্ণিমা’, ‘সেলাই করা ছায়া’, ‘কবিতার কমলবনে’, ‘বত্রিশ নম্বর’, ‘যে ধ্বনি চৈত্রে শিমুলে’, ‘বিদায়ী চুমুক’ উল্লখযোগ্য।
তার কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’, ‘ডুমুরপাতার আবরণ’, ‘চেতনার রঙ চন্দ্রশিলা’ এবং ‘লাকসাম দাদা ও অন্যান্য গল্প’। ‘কাগজে কলমে’, ‘মিশ্রচিত্রপট’, ‘নিরুদ্দেশ হাওয়ায় হাওয়ায়’, ‘জীবনের আশ্চর্য ফাল্গুন’, ‘নবরাগে নব আনন্দে’, ‘সুন্দরবন, সোঁদরবন ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘মুহূর্তভাষ্য’ ইত্যাদি তার গদ্যনির্ভর গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’,‘সপ্তরতেœর কা-কারখানা’,‘সবুজ ভাষার ছড়া’ ইত্যাদি।
তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জলের মধ্যে চাঁদ ও অন্যান্য জাপানি গল্প’, ‘বিশ্বনাগরিক গ্যাটে’, ‘পাবলো নেরুদা-শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি’, ‘শামসুর রাহমান সংবর্ধনাগ্রন্থ’,‘পদাবলী কবিতা সংকলন’ ও ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’।
তিনি কলকাতা থেকে ১৯৭৪ সালে দেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। সে সময় জাতীয় কবিতা পরিষদ ও পদাবলী কবিতা সংগঠন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। অন্য পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, নীহাররঞ্জন স্বর্ণপদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার।
এছাড়ও কবিতার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন নানা সম্মাননা।একমাত্র মেয়ে সাফিয়া আক্তার চৌধুরী মৌরী এবং দু’ ছেলে আবদুল্লাহ প্রতীক ইউসুফ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ নাসিফ চৌধুরী পাবলো। স্ত্রী কামরুনন্নেসা চৌধুরানী প্রয়াত। তিনি মঙ্গলবার ৯২৪ এপ্রিল ) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দেশের বরেন্যকবি এখন নিজ গ্রাম ফেনীর শর্শদিতে চিরনিদ্রায় শায়িত।
বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:১০ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার
এজি