Home / লাইফস্টাইল / পর্নগ্রাফি আসক্তি মস্তিষ্ক যেভাবে পরিবর্তন করে ফেলে
পর্নগ্রাফি আসক্তি মস্তিষ্ক যেভাবে পরিবর্তন করে ফেলে

পর্নগ্রাফি আসক্তি মস্তিষ্ক যেভাবে পরিবর্তন করে ফেলে

কোকেইন ও পর্নের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো মিল নেই। তবে গবেষণায় দেখা যায়, পর্ন দেখার ফলে আমাদের ব্রেইনে এক ধরনের আনন্দদানকারী কেমিক্যাল উৎপন্ন হয়। একই কেমিক্যাল ড্রাগ ব্যবহারকারীদের ব্রেইনেও উৎপন্ন হয়। পর্ন বা ড্রাগে আসক্ত ব্রেইন নতুন করে নিউরাল সার্কিট (Neural Circuit) তৈরি করা শুরু করে। শুনতে আজব লাগলেও, এটাই সত্যি। অসুন, ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক।

আগেই বলেছি, কোকেইন ও পর্নের মধ্যে সাধারণত তেমন কোনো মিল পাওয়া যায় না। একটি পাওয়া যায় জীর্ণ চিপা-চুপায়; অন্যটি ডাউনলোড করা যায় ফ্রিতে। একটির অভ্যাস খুব দ্রুত প্রবল হতে থাকে, যেখানে অন্যটি নির্ভর করে হাই স্পিড ইন্টারনেট কানেকশনের মূল্যের উপর।

তাহলে মিলটা কোথায়? মিলটা হচ্ছে ব্রেইনের ভেতর।
আপনি যদি একজন নিউরোসার্জন নাও হয়ে থাকেন তারপরও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, আমাদের ব্রেইন কীভাবে কাজ করে। নিউরাল সায়েন্স (Neural Science) সম্পর্কিত এ বিষয়গুলো আপনি যত ভালোভাবে বুঝবেন পর্নের প্রতি আপনার তত অনীহা সৃষ্টি হবে। আমাদের ব্রেইনের গভীরে রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে (reward pathway) বা পুরষ্কার তৈরীর পথ বলে একটি ব্যাপার থাকে।

এই রিওয়ার্ড প্যাথওয়ের কাজটা তার নামের মতোই, এটা আপনাকে ঠিক সেভাবে পুরস্কৃত করে যেভাবে সে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জটিল লাগছে ব্যাপারটা? আচ্ছা, আপনার সুবিধার জন্য আরেকটু সহজ করে বলছি, ব্রেইনের এই সার্কিটটি আপনাকে পুরস্কৃত করে অর্থাৎ আনন্দ দেয় যখন আপনি জীবনকে অগ্রসর করার মতো কিছু করেন। মজার কোনো খাবার খাওয়া কিংবা পছন্দের কোনো কাজ করার সময় আমাদের ব্রেইনে এমনটা ঘটে থাকে]।

তখন আমাদের ব্রেইনে কিছু কেমিক্যাল নির্গত হয়। এদের মধ্যে সাধারণত যে কেমিক্যালটি নির্গত হয় তার নাম হচ্ছে ডোপামিন, কিন্তু অক্সিটোসিনের মতো অন্য কেমিক্যালও নির্গত হয়।

সাধারণত, এই কেমিক্যালগুলো পাইকারি হারে উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, পরিতৃপ্তি পাওয়া যায় এমন যেকোনো কিছুতেই তারা উৎপন্ন হয়ে বসে থাকবে। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা ঠিক এভাবেই এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এদের কাজ আমাদের পরিতৃপ্তি অনুভব করানো, অন্য মানুষদের সাথে সম্পর্ক তৈরীতে সাহায্য করা এবং আনন্দদায়ক কোনো কাজের কথা মনে করিয়ে দেয়া। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে হাইজ্যাকড হতে পারে।

কোকেইন ও আফিম জাতীয় ড্রাগগুলো অনেক বেশী পরিমানে ডোপামিন নির্গত করতে চায়। ফলে তারা ব্রেইনের রিওয়ার্ড প্যাথওয়েতে আঘাত হানে। নেশাখোরদের মাতাল করে নাকানিচুবানি খাওয়ায়। এমন পিনিক পেতে তাদের খুব বেশি কষ্ট করা লাগে না। কয়েকটা টানই যথেষ্ট। অন্য কোন জিনিসটি এমন করে থাকে চিন্তা করুন তো?

পর্ন
আর আপনার ব্রেইনে বয়ে যাওয়া ডোপামিনের বন্যা শুধু ক্ষনিকের সন্তুষ্টিই দেয় না, ব্রেইনে স্পন্দনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুরস্কার পাওয়ার নতুন পথ অর্থাৎ রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে তৈরী করে, যা একজন ইউজারকে আগের সেই কাজে ফিরিয়ে নিয়ে যায় যে কাজের মাধ্যমে কেমিক্যালটা নির্গত হয়েছিল।

একজন ড্রাগ বা পর্ন ইউজার যত বেশী ড্রাগ নেয় বা পর্ন দেখে, তাদের ব্রেইনে এই প্যাথওয়েগুলো তত বেশি তৈরি হয়। ড্রাগ/পর্ন ব্যবহার সহজ থেকে সহজতর করতে থাকে। যার ফলে একজন মানুষ বার বার ড্রাগ নিতে চায় কিংবা পর্ন দেখতে ফিরে আসে, যদিও তারা তা অন্তর থেকে চায় না।

একজন আসক্ত ব্যক্তির ব্রেইনে এই কেমিক্যালগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় নির্গত হতে থাকে। ফলে ব্রেইনে অন্যান্য পরিবর্তনও ঘটে থাকে। একজন নেশাখোর আগের চেয়ে বেশি মজা পাওয়ার আশায় কিংবা ক্ষনিকের ভালো অনুভূতি পেতে অনেক বেশি ড্রাগ নিতে থাকে। পর্ন ব্যবহারকারীদের ব্রেইন অতিমাত্রায় ডোপামিনে ডুবে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তাই তারা আসক্তও হয় তাড়াতাড়ি।

সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, একজন পর্ন ব্যবহারকারী তার ব্রেইনের পরিবর্তনগুলো সহজে টের পায় না। কারণ, অতিরিক্ত ডোপামিনের বোঝা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ব্রেইন কিছু ডোপামিন রিসেপ্টর (dopamine receptor) কমিয়ে ফেলে। কম রিসেপ্টর থাকায় ডোপামিনের পরিমাণ কমে গেছে বলে মনে হয়। তাই একই মাত্রার পর্ন ইউজারকে আগের মতো উত্তেজনা দেয়না। যার ফলে-

অনেক পর্ন ইউজাররা আরো বেশি বেশি পর্ন খুঁজতে থাকে, অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেয় কিংবা আরো এক্সট্রিম পর্নের দিকে ঝুঁকে যায়। উদ্দেশ্য একটাই। অতিরিক্ত ডোপামিন উৎপাদনের মাধ্যমে পূর্বের উত্তেজনা ফিরে পাওয়া।

যখন একজন পর্ন ইউজার তার ব্রেইনে স্পন্দনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া কেমিক্যালগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়, যখন বুঝতে পারে যে সে আসক্ত, তখন তার মধ্যে এই অভ্যাস প্রত্যাহার করতে চাওয়ার প্রবণতা তৈরী হয়, যেমনটা একজন ড্রাগ ইউজারের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

অনেকে মনে করে পর্ন সর্বকালেই ছিল। তবে এখনকার পর্নের ভার্সন পুরোই আলাদা। ধন্যবাদ, ইন্টারনেট। ধন্যবাদ, সকল ওয়েব ব্রাউজারকে। তোমাদেরই গর্ভে পর্ন বিস্তার লাভ করছে। ডোপামিনের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজকে। পর্নের বিকৃত সব ক্যাটেগরি আর একের পর এক কৃত্রিম সৌন্দর্যের অধিকারী পর্ন অভিনেত্রীদের কাছে হার মেনে যাচ্ছে মানবতা। ভালোবাসা তো এখন জাদুঘরে।নারীর সম্মানের কথা আর না-ই বললাম।

ইউ.এস. সিনেট কমিটিকে, ড. জেফারি স্যাটিনোভার পর্নের ইফেক্ট নিয়ে বলেছিলেন, আমরা যেন নতুন এক হিরোইনের উদ্ভব ঘটিয়েছি, যা নিজের ঘরে সম্পূর্ণ প্রাইভেসির মধ্যে ব্যবহারযোগ্য এবং চোখের মাধ্যমে সরাসরি চলে যায় ব্রেইনে!

Leave a Reply