সারাদেশের মানুষ যখন পুরুনো সব ভুলে মেতে উঠেছে বর্ষবরণের আনন্দ উল্লাসে। ঠিক এমনই উৎসবমুখর দিনে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ শাজাহান তারুণ্যদীপ্ত মনোবল নিয়ে টাঙ্গাইলে রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে দৌড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মির্জা শাজাহানও তো পারতেন সবার মতোই আনন্দ উল্লাসে সময় কাটাতে। কিন্তু তিনি ভুলতে পারেননি রুপার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। তিনি রুপা হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে টাঙ্গাইল আদালত চত্বরসহ পৌর এলাকায় বছরের প্রথম দিনটির সকালে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক দৌড়ালেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকা আইডিয়াল ‘ল’ কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণের পর হত্যার খবরে চমকে উঠেন শাহজাহান। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দৌড়ে জনমত সৃষ্টি করবেন।
মধুপুর থানায় মামলার পর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে দৌড় শুরু করেন শাহজাহান। এরপর প্রতি বুধবার আদালত এলাকা থেকে শুরু করে রুপা হত্যার বিচার সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দৌড়ান তিনি। কখনো দৌড়ে, কখনো সাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান। স্থানীয়রাও তার সাথে সহমত প্রকাশ করেন।
ঘটনার পর মাত্র ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মির্জা শাহজাহান। এতেও তাঁর দৌড় থামেনি। এ রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দৌড়াবেন বলেও জানান তিনি। টাঙ্গাইল ছাড়াও তিনি ঢাকার হাইকোর্ট এলাকায় মাসে দুইবার দৌড়ান।
মির্জা শাহজাহান দ্রুত রায় কার্যকর করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে ধুমপানের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে দৌড়ে যাচ্ছেন। আমৃত্যু এধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি।
মির্জা শাহজাহান বাসাইল উপজেলার একঢালা গ্রামের মৃত মির্জা হানিফ উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল শহরের থানাপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে জাকিয়া সুলতানা রুপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রুপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রুপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রুপা হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মধ্যে ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর, চালক হাবিবুরকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। অপর আসামি ওই পরিবহনের সুপারভাইজার সফর আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া। সেই সাথে সফর আলীকে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশও দেয়া হয়। সে অর্থ নিহত রুপার পরিবারকে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও অপরাধ সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ছোঁয়া পরিবহন (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৪-৩৯৬৩) বাসটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতের পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।