প্রধান শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে স্কুল ছেড়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির তিন ছাত্রী। ইতোমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে তারা বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। মেহেরপুর গাংনী উপজেলার নওপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গেলেও হাজিরা খাতায় উপস্থিত লিখে রেখেছে শিক্ষকরা। ছাত্রীরা এক সপ্তাহ ধরে স্কুলে না গেলেও কি কারণে তাদের হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখানো হয়েছে তার লিখিত কারণ দর্শানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তবে, সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন, অনুপস্থিত থাকলে উপবৃত্তি উত্তোলনে ঝামেলা হবে, সে কারণে তারা স্কুলে না আসলেও উপস্থিত দেখায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের একটি অডিও বার্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পৌঁছেছে। অডিও বার্তা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে একটি তদন্ত টিম গঠন করে তদন্তভার দেয়া হয়েছে। তদন্তে শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়নের কথা শিকার করেছে। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও তদন্ত রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর পৌঁছায়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক স্কুলে থাকলে স্কুলে যেতে চাইছে না ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাংনী নওপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল ছাত্রীদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে অশালীন আচরণ করতো। প্রধান শিক্ষকের আচরণে বিরক্ত হয়ে ছাত্রীরা শিক্ষিকাদের শরণাপন্ন হয়। শিক্ষিকারা বিষয়টি ধামাচাপা দিলে তারা তাদের অভিভাবকদের জানায়। অভিভাবকরা মানসম্মানের ভয়ে তাদের মেয়েদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি করেছে। অভিভাবকদের মধ্যে এবং এলাকায় জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে বিষয়টি কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের বাড়িতে যায়। ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতেই বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। বিষয়টি স্কুলের ম্যাডামদের জানিয়েও লাভ হয়নি। ফলে বেশ কয়েক ছাত্রী স্কুল ছেড়েছে। ছাত্রীরা বলেছে, ‘ওই শিক্ষক থাকলে আমরা আর স্কুলে যাব না।’
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল সাত্তার বলেন, আমরা ৫/৬ দিন ধরে এলাকায় গুঞ্জন শুনছি। প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক উদ্দিন জানান, আমি বিষয়টি ইউএনও সাহেবের কাছ থেকে শুনেছি। তবে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল জানায়, আমি ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়েছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল। আমি ২৯/০১/২০১৫ ইং তারিখে এ স্কুলে যোগদান করে শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়েছে এবং স্কুলের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল জানান, বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে শুনেছি এবং ঘটনার বর্ণনা পেয়ে একটি অডিও বার্তা পেয়েছি। বিষয়টি এখনো যাচাই বাছাই চলছে।
সহকারী শিক্ষা অফিসার ফায়সাল বিন হাসান, সহকারী শিক্ষা অফিসার তাজমিরা খাতুনকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে, তদন্ত করে দুই দিনের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:৪০ এ .এম ২৬মার্চ,২০১৮সোমবার
এ.এস
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur