Sunday, April 05, 2015 08:28:53 PM
শরীফুল ইসলাম, স্পেশাল করসপেন্ডেন্ট :
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় অবৈধভাবে রাস্তার উপর ১১টি সিএনজি স্ট্রান্ড বসিয়ে এবং ৩টি সমিতির নামে চালকদের কাছ থেকে চলছে বেপোরোয়া চাঁদাবাজি বাণিজ্য। পেশীশক্তি প্রয়োগ করে অসহায় সিএনজি চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধা কিলোমিটার এলাকায় বেপোরোয়াভাবে মালিক সমিতি, প্রাতবন্ধি কল্যান সংস্থা, ১১টি স্ট্রান্ডে জিপিসহ নামে বেনামে চাঁদা উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। আর এই চক্রটির কাছে অসহায়ত্ব বরণ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ সিএনজি আটোরিকশা চালকরা। এ কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নিজেরা সিএনজির মালিক না হয়েও পেশিশক্তির বলে সরকার দলের নাম ভাঙ্গিয়ে মালিক সমিতি ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার নেতা দাবি করে রামরাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে।
সিএনজি চালক শুক্কুর আলম, শাহবুদ্দিন, জাহাঙ্গীর, জহির, বাবু, কবির, পারভেজ, ফারুক, সোহেল, ইসহাক, রাজন ও কাঞ্চনসহ বেশ ক’জন অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন ১জন সিএনজিচালক শুধুমাত্র হাজীগঞ্জ পৌরসভার চাঁদাসহ আরো প্রায় ৩টি সমিতি ও ১১টি স্ট্রান্ডে জিপিসহ নামে বেনামে ক’টি সংস্থাকে প্রতিদিন গাড়িপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দিতে হচ্ছে।
হাজীগঞ্জে প্রায় ১৮শ’ সিএনজি থেকে ওই চক্রটি প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সিএনজি মালিক সমিতির নামে নতুন করে ১০ টাকা, প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার নামে ২০টাকা, পৌরসভার ইজারাদারের মাধ্যমে ১০টাকা, প্রতি স্ট্রান্ডে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দিতে হয়। এছাড়াও লাইনের লোক ও স্থানীয় চাঁদাবাজদের চাঁদা তো রয়েছেই।
সিএনজি মালিক সমিতির নামে হাজিগঞ্জে যে সমিতি রয়েছে তারা মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা না নিয়ে সে চাঁদার টাকা অন্যায়ভাবে চালকদের কাধেঁ চাপিয়ে দিচ্ছে। এতোসব চাঁদা দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে সাধারণ সিএনজি অটো রিক্সা চালকরা।
একটি সূত্র জনায়, হাজীগঞ্জে মালিক সমিতির ( রেজিঃ নং-চট্রঃ ১৮৭৮) নামে রশিদের মাধ্যমে সিএনজি চালকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে তার সবটাই মালিক সমিতির সভাপতি সোহাগ আহমেদ মাইনু ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সুজনসহ সমিতির অল্প কিছু লোক নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।
শাহারাস্তি অটো টেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর বাসার সুমন নিজেরা জেলা কমিটি দাবি করে হাজীগঞ্জে এই অবৈধভাবে কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে এই সমিতির অনুমোদন দিয়েছেন।
হাজীগঞ্জের মালিক সমিতির নামধারী নেতারা নিজেদের লোকের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় আঠারোশ’ সিএনজি অটো রিকশার কাছ থেকে ১০টাকা করে ১৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তেমনি দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার নামে সংস্থার সভাপতি মহিবুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত জুয়েল তাদের লোকজন দিয়ে সিএনজি প্রতি দিনে ২০টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতি মাসে ওই সংস্থাটি প্রায় ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হাতিয়ে নিয়েছে। পাঁচ বছরে এভাবেই কল্যান সংস্থার নেতারা সাধারণ সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছে।
শুধুমাত্র বৈধভাবে পৌরসভার ইজারাদাররা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, হাজীগঞ্জের প্রভাবশালী নেতারা ও উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা নিজের প্রভাব খটিয়ে এবং পেশিশক্তি প্রয়োগ করে হাজীগঞ্জ এলাকারমাত্র আধা কিলোমিটার সড়কে অবৈধভাবে ১১টি স্ট্রান্ড বসিয়ে সিএনজি প্রতি ৩০টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।
ওই এলাকার পুবালী ব্যাংক চত্তর, আমিন রোড়, স্টেশন রোড়, মাছ বাজার, বিশ্ব রোড়ে ৩টি, গাউছিয়া হাইওয়ে হোটেলের সামনে ৩টি, পপুলার হাসপাতালের সামনে স্ট্রান্ড বসিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব অবৈধ স্ট্র্যান্ড থাকার কারণে হাজীগঞ্জে দিন দিন যানজটের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংস্লিষ্ট প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই অসহায় সিএনজি চালকরা হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে এবং যানজটের মাত্রা কমে যাবে। পাশাপাশি সরকারের কোষাগারে জমা হবে বিপুল অংকের টাকা।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ সিএনজি অটোরিকশাা মালিক সমিতির সভাপতি সোহাগ আহম্মেদ মাইনু সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সিএনজি মালিকদের উন্নয়নে ও ক্ষতিপূরণের জন্যই এই মালিক সমিতি করা হয়েছে। আর এই কারণে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ সিএনজি অটো রিকশা মালিক সমিতিটি মাত্র কদিন পূর্বেই অনুমোদন পেয়েছি। অন্যান্য সমিতিরা দীর্ঘদিন যাবত চাঁদা আদায় করেছে। এভাবেই ক্ষমতার প্রভাব ও পেশিশক্তি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজীগঞ্জে সড়কে চাঁদাবাজদের রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ থানার ওসি শাহআলম জানায়, যারা অবৈধভাবে সিএনজি স্কুটার থেকে চাঁদা আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এসব কাজ করছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তহলে হাজীগঞ্জের অবৈধ স্ট্যান্ড ও যারা চাঁদা আদায় করছে তাদেরকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/এসই/2015