নির্মাণশিল্পের প্রধান কাঁচামাল রডের মূল্য লাগামহীন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিমেন্ট, বালু, ইট ও পাথরের দাম। ফলে সম্ভাবনাময় আবাসন শিল্পখাতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
লফিয়ে লাফিয়ে মূল্যবৃদ্ধির এ ঘটনাকে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বলে দাবি করছেন নির্মাণশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। ইস্পাত শিল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশের রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
পাথর বালু, ইট ও সিমেন্টের ক্ষেত্রেও মূল্যসমন্বয় করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই রডের দাম বেড়েছে দুই দফায় টন প্রতি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। ৪৭ হাজার টাকার রড ৬৫ থেকে ৬৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
সিন্টের দাম বস্তাপ্রতি ৪০ টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি আরেক দফা বাড়বে বলে হুমকি দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
৩৪০ থেকে ৩৮০ টাকার সিমেন্ট এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা। প্রতি হাজার ইটের দাম এক লাফে এক হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫০০ থেকে ৯০০০ টাকা।
১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরের পাথরের দাম কয়েক দফায় বেড়ে এখন ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় ঠেকেছে। প্রতি ট্রাক সিলেকশন বালুর দাম সাত হাজার থেকে বেড়ে ৯ হাজার হয়েছে। এতে করে পুরো নির্মাণশিল্পে এক ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগিরা।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুনীর উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, বড় উৎপাদকেরা সিন্ডিকেট করে রডের দাম বাড়াচ্ছেন। গত বছরের বাজেটের আগে ভ্যাট-ট্যাক্সের অজুহাতে এক ধাক্কায় রডের দাম টনপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলেও পরে আর দাম কমানো হয়নি। এ নিয়ে অনেক দেন-দরবার করেও লাভ হয়নি। এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ ও পরিবহন খরচ বাড়ার যুক্তি দেখিয়ে ওই সিন্ডিকেটই রডের দাম বাড়াচ্ছে।
রডের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সূক্ষ্ম কারচুপি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে বেশি দামে রড সরবরাহ করার জন্যই এমনটি করা হয়েছে। এতে স্থানীয় ঠিকাদাররা মারাত্মক সমস্যার মুখে পড়ছেন। ঘন ঘন রড-সিমেন্টের দাম বাড়ায় বেঁধে দেয়া অর্থের মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্ধিত খরচ যোগ করে দেখা গেছে, রডের দাম ৩ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানো যৌক্তিক। কিন্তু সেখানে ৩০ শতাংশের মতো দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে, পাশাপাশি স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত, নইলে এ সিন্ডিকেট দাম বাড়াতে থাকবেই।
বার্তা কক্ষ