Home / সারাদেশ / জীবনসংগ্রামের গল্প শোনালেন ৩ নোবেলজয়ী
জীবনসংগ্রামের গল্প শোনালেন ৩ নোবেলজয়ী

জীবনসংগ্রামের গল্প শোনালেন ৩ নোবেলজয়ী

নিজেদের জীবনসংগ্রামের গল্প দর্শক-শ্রোতাদের শুনিয়েছেন ঢাকা সফররত শান্তিতে নোবেলজয়ী তিন নারী। তাঁরা বলেছেন, নারীকে নিজের অধিকারের কথাটি নিজেকেই বলতে হবে। জীবনসংগ্রামের জায়গাটায় নিজের দৃঢ়তাও অনেক বেশি জরুরি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে নারীপক্ষ আয়োজিত ‘জীবন ও সংগ্রামের পথে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে নিজেদের জীবনের গল্প শোনান নোবেলজয়ী ইরানের শিরিন এবাদি, আয়ারল্যান্ডের (বর্তমানে যুক্তরাজ্য বসবাসরত) মেরেইড ম্যাগুয়ার ও ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান। শিরিন এবাদি বলেন, ‘১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে গণতন্ত্রের নামে চরম অগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। ইসলামের নামে যে পরিবর্তনগুলো এলো, সেগুলো নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। ইরানে পাথর ছুড়ে মারার শাস্তি আছে, হাত কেটে ফেলার নিয়ম আছে। বাংলাদেশও মুসলিম দেশ; এখানে এমন কোনো নিয়ম তো নেই। নারীর জীবনের মূল্য পুরুষের অর্ধেক! তারা বলে, দুজন নারী সাক্ষীর সমান একজন পুরুষ সাক্ষী।’

শিরিন এবাদি বলেন, ‘আমি যখন কথা বলা শুরু করি, আমাকে থামানোর হেন চেষ্টা নেই করা হয়নি। আমাকে কাজের জায়গা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আমি থামিনি। এরপর আমি রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারাবন্দিদের নিয়ে কাজ শুরু করি। আমি দেশে-বিদেশে পুরস্কার পেতে শুরু করি আমার কাজের কারণে। আমি যত বেশি খ্যাতি লাভ করতে থাকি, সরকার ততই বিগড়ে যেতে থাকে। আমার অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

শিরিন এবাদি বলেন, ‘আমার সহকর্মীদের জেলে ঢোকায় তারা। সে সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ঘটনার পর আমি যখন ইরানে ফিরতে চাই, সহকর্মীরা আমাকে নিষেধ করেন। তাঁরা বলেন, আমি যদি দেশের বাইরে থাকি আমার কণ্ঠরোধ হবে না। বিশ্ব আমার কথা শুনবে। আমার স্বামী ও বোনকে জেলে নেওয়া হয়। বলা হয়, আমি চুপ করে গেলে তারা মুক্তি পাবে। আমার উত্তর ছিল : আমি তাদের প্রচণ্ড ভালোবাসি কিন্তু আমি সত্যকেও ভীষণ ভালোবাসি। এরপর সরকার আমার সহায় সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বলে, আমি যদি চুপ করি, সব ফিরিয়ে দেবে। আমি বলি, আমার ওসব দরকার নেই। আমার কথা কাজ আমি চালিয়ে যাই।’

ইরানের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ৩০ বছরে মধ্যে উল্লেখ করে শিরিন এবাদি বলেন, ‘বেকারের সংখ্যা বেশি; মানুষ স্বাধীনতা চায়, যা তাদের নেই। কিন্তু ইরানের যা আছে, তা দিয়েও ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। আমি এখনো আশাবাদী, ইরানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে।’

মেরেইড ম্যাগুয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা সারা বিশ্বের সহিংসতা দেখতে দেখতে যখন প্রশ্ন করি, বিশ্বে আশান্বিত হওয়ার কিছু কি আদৌ আছে? তখনই দেখতে পাই ১০ লাখ রোহিঙ্গার পাশে কিভাবে বাংলাদেশ দাঁড়ায়।’ আয়ারল্যান্ডের এথনিক সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুদের কথা শুনতে চায় না।’

তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, ‘দারিদ্র্য থেকে আরব দেশের লড়াই, ইয়েমেনের লড়াই, আমার লড়াই। একসময় ইয়েমেনের নারীরা বলেন, অনেক হয়েছে। তারা বেছে নেয় শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের পথ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে একমাত্র পথ।’ তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিক ছিলাম। লিখতে শুরু করি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। আমি সংগঠন করব, সরকার তার লাইসেন্স দেবে না। আমাদের চুপ করাতে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমরা বললাম, লাগবে না লাইসেন্স। যেকোনো আঘাতে আমরা পথে নেমেছি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চেয়ে। যখন রাস্তায় নেমেছি, তখন সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ ছিল না গ্রহণ করেনি। কিন্তু আমরা ফুল উচিয়ে শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের পথেই থেকেছি।’
(কালের কন্ঠ)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০: ৫৫ এ.এম ১মার্চ ২০১৮বৃহস্পতিবার।
এএস.