ওবায়দুল কাদের (ফাইল ফটো)জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা সেটা আদালতের সিদ্ধান্ত, সরকারের নয় বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা আদালতের বিষয়, সরকারের বিষয় নয়। আদালতের বিষয় মাঠে টেনে আনা ঠিক হবে না। নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র আদালতের, আওয়ামী লীগের নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন—খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আগের দিন (৭ ফেব্রুয়ারি) দলের গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা কেন তুলে নেওয়া হলো? এটা আমার একটু জানার আগ্রহ আছে। কারণ, আমি যতদূর জানি, ৭ নম্বর ধারায় ছিল- কুখ্যাত, দুর্নীতিবাজ ও দেউলিয়ার বিরুদ্ধে দলের রক্ষাকবজ। হঠাৎ কেন এই ধারা তুলে নেওয়া হলো? বিএনপি আসলে সব পারে। দলের কাউন্সিল ছাড়া গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে পারে, যেটা আওয়ামী লীগ কল্পনাও করতে পারে না। তাহলে এই ৭ নম্বর ধারা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তারা কি দুর্নীতিবাজ, দেউলিয়া ও দণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষে লাইসেন্স দিয়ে দিলো? এখন যেকোনও দুর্নীতিবাজ, দেউলিয়া ও দণ্ডিত ব্যক্তি বিএনপির নেতা হতে পারবেন। দণ্ডিত ও পলাতক ব্যক্তিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতেই তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে বারবার জানতে চাইলেও তারা অন্যদিকে চলে যায়। আমি ও দেশবাসী বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে চাই। তারা কি দুর্নীতিবাজ ও দণ্ডিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করবে? তাদের গলার কাঁটা হবে দলের গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা তুলে নেওয়া। গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা তুলে নিয়ে বিএনপি নিজেই সংকটে পড়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দলটি যেসব কর্মসূচি দিয়েছে তা কার বিরুদ্ধে? রায় দিয়েছেন আদালত, আর দলটি কর্মসূচি দিচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। তার মানে, তারা আদালতের রায় মানে না। রায় যদি না মানে, তাহলে আবার আপিল করতে যাচ্ছে কেন? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই বলে দিয়েছেন, যেনতেন রায় হলে সেই রায় তারা মানবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেবেন আদালত। ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় পেতে একটু সময় লাগবে, এটা যুক্তিসঙ্গত। তাছাড়া, আমি একটি সংবাদপত্রে দেখেছি, তারা নিয়ম মেনে সার্টিফায়েড কপির আবেদন করেনি।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে এবং আদালত তাকে জামিন দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যদি কোনও পর্যবেক্ষণ দেন, তাহলে সেখানে সরকারের কিছুই করার নেই।’
তাহলে বিএনপিকে ছাড়াই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারও জন্য কিছু আটকে থাকে না।’
৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার সেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন করতে চায় কিনা, প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের সংসদের স্পিকার ও একজন সংসদ সদস্য দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান হয়েছেন। ওই সংস্থা দুটির সম্মেলনও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের স্পিকার ও সংসদ সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন। তারা তো কেউ প্রশ্ন তোলেননি? বা সেসব সংস্থার প্রধান হওয়া নিয়ে কেউ বিরোধিতা করেননি। তাই কারও জন্য নির্বাচনি ট্রেন অপেক্ষা করবে না। নির্বাচনি কার্যক্রম ও সরকারের কার্যক্রম যথানিয়মে চলবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে উসকে দিচ্ছি না। তাদের ক্ষমতা নেই বলে সহিংস আন্দোলন করতে পারছে না। তবে তারা সুযোগ পেলেই সহিংস আন্দোলন শুরু করবে। ক্ষমতায় কুলায় না, তাই সহিংস হতে পারে না। সহিংস আন্দোলন করতে গেলে তারা জনগণের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সুযোগ পেলেই তারা মিলিট্যান্স ভায়োলেন্স করে। তারা মাঝে মাঝে রাইফেল ভাঙে, আসামি ছিনিয়ে নেয়, প্রিজনভ্যানে হামলা করে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সংবিধান অনুযায়ী চলবো। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব দলের সংবিধান মেলে চলা উচিত। সংবিধান মেনে চলা শুধু সরকার বা আওয়ামী লীগের একার দায়িত্ব নয়। সম্প্রতি নির্বাচনগুলোও যেভাবে হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সেভাবেই হবে।’
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ৩৫ পি.এম, ১৯ ফেব্রুয়ারি২০১৮, সোমবার।
কে এইচ