গত কয়েক মাস ধরেই প্রকৌশল, জ্বালানি, বস্ত্র ও ওষুধ খাত শেয়ারবাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। এর মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের প্রায় ৬০ শতাংশই রয়েছে এই চার খাতের দখলে।
অপরদিকে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এ খাতগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এক সময় জায়গাটি ছিল ব্যাংক খাতের দখলে। শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে পরিচিত এই ব্যাংক খাত এখন বেশ তলানিতে। ধারাবাহিকভাবে কমছে এ খাতের অবদান।
ডিএসইর খাতভিত্তিক কোম্পানির তালিকা থেকে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ২২টি খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে লেনদেন হয় ২০টি খাতের। এই ২০টি খাতে কোম্পানি আছে ৩৩০টি।
২২টি খাতে মধ্যে প্রকৌশল, জ্বালানি, বস্ত্র ও ওষুধ এই চার খাতের কোম্পানির সংখ্যা ১২১টি, যা লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৬ শতাংশের সমান। অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ কোম্পানির দখলেই রয়েছে মোট লেনদেনের ৬০ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজারে এই চার খাত আধিপত্য বিস্তার করছে।
ডিএসইর মাসভিত্তিক লেনদেনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট লেনদেনে প্রকৌশল, জ্বালানি, বস্ত্র ও ওষুধ খাতের অবদান ছিল ৫৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশে। আর সদ্য সমাপ্ত মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ২২ শতাংশে।
ডিএসইর মার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাসটিতে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ওষুধ খাত। মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশই এ খাতটির দখলে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মোট লেনদেনে ওষুধ খাতের অবদান ছিল ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৭টি।
ওষুধ খাতের পরেই রয়েছে প্রকৌশল খাত। মার্চ শেষে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে প্রকৌশল খাত লেনদেনে শীর্ষে ছিল। মাসটিতে মোট লেনদেনে প্রকৌশল খাতের অবদান ছিল ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩২টি।
মার্চে লেনদেনে তৃতীয় স্থানে থাকা বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৪৪টি। এ মাসে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশ, আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
লেনদেনে চতুর্থ স্থানে থাকা জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। মার্চে মোট লেনদেনে এ খাতের অংশ ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে লেনদেনে জ্বালানি খাতের অংশ ছিল ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে জ্বালানি খাতের লেনদেন কমেছে।
এদিকে এক সময় শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত এবং লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্যাংক খাত চলে এসেছে ৬ষ্ঠ স্থানে। মার্চ মাস শেষে মোট লেনদেনে এই খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশে, যা ফেব্রুয়ারি শেষেও ছিল ৮ শতাংশের উপরে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাত লেনদেনে প্রথম স্থান ধরে রাখে। সে সময় মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ২০ থেকে ২৫ শতাংশের উপরে ছিল। মূলত ২০১১ সালের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবদান কমতে থাকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সেই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করবে, যে খাত থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। ২০১০ ও ২০১১ সালে ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দিয়েছিল তা পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেনি। যে কারণে ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেনে কিছুটা নেতিবাচাক প্রভাব পড়েছে।
প্রকৌশল, জ্বালানি, বস্ত্র ও ওষুধ খাতের অবদান বাড়ার কারণ হিসেবে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, এই খাতগুলো ভালো করছে। অন্য খাতের কোম্পানির থেকে এ খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফা পাচ্ছেন, যে কারণে এই খাতের কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।
একই বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীরা যে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা পাবেন সাধারণত সে খাতেই বিনিয়োগ করবেন।
ব্যাংক খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের যে হারে বোনাস শেয়ার দিয়েছে, সে হারে নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। বোনাস শেয়ার দেওয়ার কারণে কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যাংকগুলো আরও বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ দিলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তো।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চে মোট লেনদেনে অাধিপত্য বিস্তার করা ৪টি খাত বাদ বাকি ১৬টি খাতের প্রতিটির এককভাবে অবদান ৮ শতাংশেরও নিচে। এর মধ্যে ৫ শতাংশের উপরে অবদান আছে মাত্র ৪টি খাতের।
এই চারটি খাতের মধ্যে বিবিধ খাতের অবদান ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, আর্থিক খাতের ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং খাদ্য খাতের অবদান ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্যটি ব্যাংক খাত।
বাকি খাতগুলোর মধ্যে ৩ শতাংশের উপরে অবদান আছে শুধু সিমেন্ট খাতের। এ খাতটির অবদান ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর ২ শতাংশ বা তারও নিচে অবদান আছে ১১টি খাতের। এর মধ্যে ৪টি খাতের এককভাবে অবদান ১ শতাংশেরও কম।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, মার্চে মোট লেনদেনে বীমা খাত ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ ২ দশমিক ১৯ শতাংশ, আইটি ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সিরামিক ১ দশমিক ৭২ শতাংশ, সেবা ও আবাসন ১ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ভ্রমণ ১ শতাংশ অবদান রেখেছে।
এক শতাংশের নিচে অবদান থাকা খাতগুলোর মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড দশমিক ৬৬ শতাংশ, পাট দশমিক ২৮ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ দশমিক ১৩ শতাংশ, চামড়া দশমিক ৬২ শতাংশ ও বন্ডের দশমিক ০৩ শতাংশ। (সূত্র- দ্যা রিপোর্ট)