আমি আসছি, সিলেটবাসীর কাছে অনেক ভালোবাসা নিতে, বাবা শাহজালালের কাছে এসেছি দোয়া নিতে। আশা করি, বাবা শাহজালাল আমার দোয়া কবুল করবেন। আগামী নির্বাচনে ভালো করব।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এসব মন্তব্য করেন।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে যে রায় ঘোষণাই করা হোক না কেন, তা সবাইকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, তিনিও খালেদা জিয়ার সময় বিভিন্ন মামলার রায় মেনে নিয়েছিলেন।
৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য আছে। ওই মামলার প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্বাস করে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নয়, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চায় উল্লেখ করে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁরা জোটে নেই। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। তবে তাঁরা নির্বাচনে বিশ্বাস করেন। নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তন করা যায় না। কাল থেকে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা শুরু
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সিলেট এসেছি বাবা শাহজালালের দরবারে দোয়া নিতে। প্রতিবার এটা আমরা করি। উনার দোয়া নিয়ে আগামীকাল থেকে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করব। আশা করি, উনি আমাদের দোয়া কবুল করবেন।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। জাতীয় পার্টি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। জাতীয় পার্টি সংবিধানে বিশ্বাস করে। ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা মেনে আমরা পদত্যাগ করেছিলাম। আশা করেছিলাম, আমরা নির্বাচন করতে পারব। কিন্তু তখনকার সরকার, বিশেষ করে জাস্টিস সাহাবুদ্দীন আমাদের প্রতি অবিচার করে আমাদের নির্বাচন করতে দেন নাই। আমাদের জেলে পাঠিয়েছিলেন, সব নেতৃবৃন্দকে। আমার স্ত্রী, পুত্র, পরিবার সবাই জেলে ছিল। আমরা সে অবস্থায়, বন্দি অবস্থায় জেলখানা থেকে নির্বাচন করেছিলাম। কারণ আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তন করা যায় না। নির্বাচন না হলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায় না। আমরা নির্বাচন করেছিলাম, সব সময় নির্বাচন করেছি। আমি জেলখানায় ছিলাম ছয় বছর। সেখান থেকে দুইটা নির্বাচন করেছি।’
‘বাবা শাহজালাল আমার দোয়া কবুল করবেন’
সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, ‘আমি সিলেটবাসীর প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাকে আটটা আসন দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, ফাঁসির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সরকারের পরিকল্পনা ছিল, সেটা বাস্তবায়ন হতে দেননি। তাই সিলেটবাসীর কাছে চিরকাল, চিরজীবন আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আমি আসছি, সিলেটবাসীর কাছে অনেক ভালোবাসা নিতে, বাবা শাহজালালের কাছে এসেছি দোয়া নিতে। আশা করি, বাবা শাহজালাল আমার দোয়া কবুল করবেন। আগামী নির্বাচনে ভালো করব।’
আগামীতে এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘এখন আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনে প্রার্থী রয়েছে আমাদের। আগামী দিনে রাজনৈতিক অবস্থা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তোমরা বুঝতেই পারছ, কী পরিস্থিতিতে যাচ্ছি আমরা।’
‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্বাস করি না’
চলমান সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘সংবিধানের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্বাস করি না। কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের ওপর সুবিচার করে নাই। আমরা সংবিধানের মাধ্যমে নির্বাচন করতে চাই। সংবিধানে যে লেখা আছে, সেভাবে আমরা নির্বাচন করতে চাই। সংবিধানের বাইরে নির্বাচন করতে চাই না আমরা।’
সরকারি দলের সঙ্গে জোট করা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা জোটে নেই। আমরা বিরোধী দল করি। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা আমি বলতে পারছি না, ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’
বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাহলে কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ এখনো ঠিক হয়নি। ভবিষ্যৎ অবস্থা দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব। আশা করি, আমরা যে ব্যবস্থা নেব, সঠিক হবে সেটা। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য, জাতীয় পার্টিকে জনগণের সেবার করার জন্য আল্লাহতায়ালা নিশ্চয় আমাদের আরেকবার সুযোগ দেবেন।’
জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন না করলে কতটি সিট পাবেন—জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা বলা যাবে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব যে আমরা একলা নির্বাচন করব, না কত আসনে নির্বাচন করব।’
সবাইকে শান্ত থাকতে বললেন এরশাদ
৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় হবে। সে রায়কে কেন্দ্র করে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল মনে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে আপনার? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি রায় শোনার জন্য। আমার বিরুদ্ধে অনেক রায় হয়েছে। উনি আমার বিরুদ্ধে অনেক রায় দিয়েছিলেন। ছয় বছর জেলে ছিলাম, অনেক কষ্ট করেছি। আমার স্ত্রী, পুত্র পরিবার তিন বছর জেলে ছিল। সে জন্য রায় সম্পর্কে আমরা অপেক্ষা করছি, কী রায় হবে। কোর্ট দেবে, আমরা সেটা মেনে নেব। আমার মনে হয়, রায় শোনার পর সবার শান্ত থাকা উচিত। রায়টাকে সবার মানতে হবে। আমরাও মেনেছি।’ (এনটিভি)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:০৩ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ