রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিন দেখা এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জকো উইদোদো। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ফার্স্ট লেডিকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রথম ঢাকায় আসা ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান উইদোদোকে ২১ দফা গান স্যালুট আর লালগালিচায় পূর্ণরাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে বাংলাদেশ। শুরুতে অতিথিদ্বয়কে দু’টি শিশু পৃথক ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানায়। পরে প্র্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরের অস্থায়ী অভিবাদন মঞ্চে তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে গার্ড পরিদর্শন ছাড়াও উপস্থিত সরকারের মন্ত্রী, কূটনৈতিক কোরের ডিনসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি।
বিমানবন্দরের বর্ণাঢ্য ওই আনুষ্ঠানিকতায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনৈতিক কোরের ডিন আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মোটর শুভাযাত্রায় তাকে রাজধানীর তারকা হোটেল প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে নিয়ে আসা হয়। সফরকালে ওই হোটেলেই থাকছেন তিনি। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তার বাংলাদেশ সফরের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর রাতে বঙ্গভবনে তার সম্মানে প্রেসিডেন্ট আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। ওই ভোজের আগে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়।
আজ তার সফরের সবচেয়ে শুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হচ্ছে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন। দুপুরে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছাবেন। সেখানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মুসলিম ওই জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের করুণ কাহিনীগুলো শুনবেন এবং এখানে তাদের অবস্থা সরজমিনে দেখবেন তিনি। তার আগে দিনের শুরুতে সাভারে জাতির বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেন এবং পরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে তার। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরকারী আসিয়ান জোটের নেতৃস্থানীয় সদস্য ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ওই নেতা সোমবার সকালে কক্সবাজার থেকেই আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। উল্লেখ্য, ঢাকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ‘বন্ধু’ মিয়ানমার ও ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওই মুসলিম রাষ্ট্র।
দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ওই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি দু’দফায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেন। রোহিঙ্গা-বোঝা লাঘবে যে কোনো মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিলেও সুচি সরকারকে চাপ না দিয়ে ‘কিছুটা সময় দেয়ার’ বার্তা দিয়ে যান জাকার্তার বিদেশমন্ত্রী। প্রেসিডেন্টের সফরে ইন্দোনেশিয়ার সেই অবস্থানের পরিবর্তন আশা করে বাংলাদেশ। এমজমিন
(এমটিনিউজ)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ০০ এ.এম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮,রোববার
এএস