অসময়ের টানা বৃষ্টিতে আলুর আবাদকৃত বীজের জমিতে হাটু পানি জমেছে। টানা পরপর দু’বার আলুর ফলন নষ্ট ও এবার আলুর বীজতলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ফসল উঠানোর পূর্বেই লাখ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়েছেন।
অকেন কৃষকই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। গত বছর চাঁদপুরে আলুর বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটলেও শেষের দিকে সংরক্ষণ অভাব ও সংরক্ষিত আলুর ন্যার্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক মোটাং অংকের অর্থ লোকসান দিয়েছে।
সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে চলতি বছর আবার চাষ শুরু করতে গিয়েই লোকসানের মুখে পড়তে হলো কৃষকদের।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি উপজেলার একাধিক অঞ্চলে কৃষকরা আলু বীজ রক্ষায় পানি নিষ্কাসন করছেন।
কচুয়া উপজেলার পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের প্রসন্নকাপ, তুলপাই, মালচোয়া কাদির খিল, বাঘমারা ও ৩নং বিতারা ইউনিয়নের তেগুরিয়া, মাঝিগাছা, বুধন্ডাসহ বেশ কিছু গ্রামের কৃষকদের হাহাকার। অধিক ফলন ও মুনাফা লাভের আসায় বুননকৃত স্বপ্নের ফসল আলুর বীজ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন পাগল প্রায় হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর সমগ্র কচুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৯শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে টানা বর্ষণের কারনে ১’শ হেক্টর জমির আলু পানিতে নিমর্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কিছু কৃষকরা হচ্ছে- তেগুরিয়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়া প্রধানের ৭২ শতাংশ, প্রসন্নকাপ গ্রামের আব্দুল মান্নান মজুমদারের ২৫২ শতাংশ, রুহুল আমিন ৪৮ শতাংশ, জয়নাল মজুমদার ১৩০ শতাংশ, মুজাম্মল হোসেন ৪২ শতাংশ, হুমায়ুন মজুমদার ৪৮ শতাংশ, আবুল কালাম ৬০ শতাংশ, হালিম মিয়া ১২০ শতাংশ, আব্দুর রহিম ২৭৬ শতাংশ, মালেক প্রধান ১৮০ শতাংশ, দুলাল প্রধান ১২০ শতাংশ, শাহ আলম মজুমদার ৬০ শতাংশ, গিয়াস উদ্দিন ৬০ শতাংশ, ডাঃ নজরুল ইসলাম ১০০ শতাংশ, হান্নান মজুমদার ১২০ শতাংশ, জাকির হোসেন ৮০ শতাংশ, শরীফ পাটোয়ারী ৪০ শতাংশ, আমির হোসেন ১২০ শতাংশ, হাসান মজুমদার ৪৮ শতাংশ, সামাদ মিয়াজী ৬০ শতাংশ, গোলাম রাব্বানী ১০২ শতাংশ, নাছিমা ২০ শতাংশ, নুরুল ইসলাম ৪৮ শতাংশ। বাঘমারা গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন ২০০ শতাংশ, ভুলু মিয়া ২৮০ শতাংশ, আলম ৬০ শতাংশ, মোতালেব ১২০ শতাংশ, দেলোয়ার ১৮০ শতাংশ, সুমন সরকার ২৬০ শতাংশ, মহিউদ্দীন ২২০ শতাংশ, রনি ৯০ শতাংশ, মহিউদ্দীন ১৫০ শতাংশ, নুরুল ইসলাম ১২০ শতাংশ, আলাউদ্দীন ২১০ শতাংশ। কাদিরখিল গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান চৌধুরী ১২০ শতাংশ, আলম চৌধুরী ১৩০ শতাংশ, জামাল চৌধুরী ৯০ শতাংশ, রমিজ মুন্সি ১২০ শতাংশ, দুলাল কাজী ১২০ শতাংশ ও ইব্রাহীম চৌধুরীর ১২০ শতাংশসহ উপজেলার প্রায় কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের কষ্টার্জিত রোপনকৃত আলুর বীজ অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েগেছে। ধারদেনা, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করতে গিয়ে কৃষক তাদের ক্ষতিপূরণ পেতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আহসান হাবীব চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এ বছর আমাদের উপজেলায় ৩ হাজার ৯ শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। আমাদের কৃষক ভাইয়েরা ৩ শ’ ৭৫ হেক্টর আলু চাষাবাদ করেছেন। তিন-চার দিনের টানা বর্ষণে প্রায় ৫০ হেক্টর আলুর জমি পানিতে নিমর্জিত রয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি যাতে জমি থেকে দ্রæত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করেন।
জিসান আহমেদ নান্নু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:৩০ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ