চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত আলুর বিকল্প ব্যবহার না থাকায় উদ্বৃত্ত অনেক আলু ফেলে দিতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রোববার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাঁরা বলেন, চলতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন আলু সম্ভবত ফেলে দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি আলুর জাতে উন্নয়ন আনার দাবি জানিয়ে বলেছেন, গুঁড়া কম পাওয়া যায় বলে দেশি আলু বিদেশে বাজার পাচ্ছে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সমিতির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশে এবার রবি মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয় প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মেট্রিক টনের। বাকি ১৫-২০ লাখ টন আলুর চাহিদা না থাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে না। আবার উপযোগী না হওয়ার কারণে এ আলু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। খাওয়া ছাড়া দেশেও বাড়তি কোনো ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে শেষ মুহূর্তে ১৫-২০ লাখ টন আলু ফেলে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। ’
মোশারফ হোসেন লোকসান কমাতে সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করেন।
তিনি বলেন, উৎপাদন বেশি থাকায় দাম কমতে কমতে এখন তলানিতে ঠেকেছে। এতে সরকার, কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ী ও চাষিসহ প্রত্যেকেরই প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
সমিতির সভাপতি আরো বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে সরকার সারের মাধ্যমে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে এই আলু কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে সংরক্ষণ করছেন এবং সারা বছর সেটার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করছেন। অথচ জুলাই থেকে আলুর ক্রমাগত দরপতনে এখন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে দুই-তিন টাকায়। এই লোকসান তো শুধু আমাদের নয়, কৃষক ও সরকারেরও। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এর পরিমাণ দুই হাজার ২৫০ কোটি টাকা। আমরা চাই সরকার অন্যান্য দেশের হিমাগারগুলোতে যেভাবে প্রণোদনা দেয় আমাদেরও সেভাবে প্রণোদনা দিক। ঋণের বোঝা আমরা পরিশোধ করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে আলু কিনতে পারব না। আর আলু না কিনলে কৃষক মার খাবে। ’
রপ্তানিতে বেশ কিছু বাধা রয়েছে উল্লেখ করে সমিতির সহসভাপতি ড. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরে আমরা আলু রপ্তানি করছি নামমাত্র পরিমাণ। আলুর জাতের উন্নয়ন না হওয়া ও ব্রাউন রড নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে আমরা রপ্তানিতে আগাতে পারছি না। সরকারের কাছে এ ব্যাপারে বারবার সহযোগিতা চেয়েছি। আমাদের হয়তো রপ্তানিতে প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু রপ্তানিই তো করতে পারছি না। উন্নত জাতের আলু চাষ করতে পারলে আমরা হয়তো রপ্তানিতে ভালো করতে পারব। কারণ এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ’
কামরুল হোসেন চৌধুরী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘দেশি জাতের ১০০ কেজি আলু শুকিয়ে গুঁড়া করলে যেখানে ছয়-সাত কেজি পাউডার মেলে, অন্যান্য দেশের আলু গুঁড়া করে প্রায় সাড়ে ১২ কেজি পাউডার পাওয়া যায়। এ কারণে তারা আমাদের আলু নিতে চায় না। ’ এখানে সরকারি সহযোগিতায় কাজ করতে পারলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডে প্রচুর আলু রপ্তানি সম্ভব বলে জানান তিনি। ভালো রপ্তানি করতে পারলে এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
প্রত্যাশিত রপ্তানি হতে আরো প্রায় চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে মনে করেন সংগঠনের নেতারা। এ জন্য তাঁরা সাময়িক সময়ে সংকট দূর করতে কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এর মধ্যে চালের দাম বেশি থাকায় সরকারের বিভিন্ন ত্রাণকাজে, কাবিখার মতো প্রকল্পে চালের সঙ্গে আলু বিতরণ, রোহিঙ্গাদের ত্রাণে আলু দেওয়া, ভাতের পরিবর্তে আলু দিয়ে খাদ্য তৈরিতে সরকারের প্রচারণা, অন্যান্য কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো হিমাগার শিল্পের বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ ছাড় প্রদান, লোকসানের কারণে ব্যাংকঋণ প্রদানে সহযোগিতা এবং রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ প্রণোদনা। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪১৬টি কৃষিভিত্তিক হিমাগার রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাকিম আশরাফসহ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের অন্য পরিচালকরা।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকায়।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১ : ৭ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur