বাজারে এসেছে নতুন চাল। ধান পাওয়া যাচ্ছে ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা মণ দরে। এ দামে ধান কিনে লাভসহ সব খরচ যোগ করলে প্রতি কেজি চালের দাম ৪৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা না।
ফলে চালের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছিল তা এখন কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর উল্টো। রাজধানীর বাজারে সব ধরনের চাল কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ৪৫ টাকা কেজি দরে চাল মেলা তো দূরের কথা, কিছু কিছু চালের দাম ৭০ টাকাও ছাড়িয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু মিল-মালিক কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম নিজেই জাগো নিউজ’র কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, বাজারে এখন নতুন চাল এসেছে। এ পরিস্থিতিতে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এখন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে ধান পাওয়া যাচ্ছে। এ দামে ধান কিনে, সেই ধানের চালের দাম সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা হতে পারে। কিন্তু বাজারে বর্তমানে চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকায়। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের এমন বাড়তি দাম।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সরু চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ থেকে ৬৭ টাকায়। নাজির সাইলের দাম বেড়ে ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ৫০ টাকায় পাওয়া যেত।
নতুন চাল আসার পরও চালের দাম না কমায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে। রামপুরা বাজারে চাল কিনতে আসা গৃহিনী হালিমা বেগম বলেন, একের পর এক জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিছুদিন আগে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। তার প্রশ্ন, এখন কেন পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হবে? এখন আবার চালের দাম বেড়েছে। অথচ নতুন ধান উঠেছে। বাজারেও নতুন চাল এসেছে। তাই চালের দাম কমার কথা। কিন্তু দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের মেসার্স আল্লাহর দান রাইস স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, বাজারে নতুন চাল এসেছে। কিন্তু গত চার-পাঁচদিনে চালের দাম দু’দফা বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাপারি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০ টাকা করে দু’দফায় ১০০ টাকা, আবার কেউ কেউ ১০০ টাকা করে দু’দফায় ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। মিনিকেট, মোটা সব ধরনের চাল আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, যারা চাল বানায় অর্থাৎ মিলাররা যদি দাম না কমায় তাহলে দাম বাড়তেই থাকবে। এখন সিজন, এ সময়ও ৬৫-৬৬ টাকায় চাল বিক্রির অর্থ আমরা মিল-মালিকরা চালের দাম কমাচ্ছি না। আর আমরা যে দাম কমাচ্ছি না এর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী তাও বুঝতে পারছি না।
‘আমরা ব্যবসা করার জন্য এসেছি। যারা দেখভালের দায়িত্বে আছেন, তারা যদি বসে থাকেন, আমি তো সুযোগ নেবই। আমি এক টাকার জিনিস ২০ টাকা ধরব’- বলেন খোরশেদ আলম।
তিনি আরও বলেন, চালের ব্যবসা ১৫ থেকে ২০ জনের দখলে চলে গেছে। কয়েকজন ব্যাংক থেকে ৫০০ থেকে দুই হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছেন। ব্যাংক ঋণ নিয়ে এখন তারা এ সিজনে কম দামে ধান কিনছেন। কারও কারও প্রত্যেক জেলায় গোডাউন আছে। ধান কিনে গোডাউনে মজুদ করছেন। তারাই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ান-কমান।
চালারে দাম কমানোর উপায় হিসেবে তিনি বলেন, সরকারের উচিত অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ না করে, এখনই আমদানি করা। এখন চাল আমদানি করলে অনেক কম দামে পাওয়া যাবে। ভারতে যে চালের দাম ৪৫ টাকা হয়েছিল, এখন তা ৩৫-৩৬ টাকায় পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি এ দেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল না কিনে আমদানি করে তা হলে তিন লাখ টন চাল ব্যবসায়ীদের হাতেই থাকবে। এতে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে। কিন্তু সরকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা দিয়ে চাল কিনে গোডাউনে নিলে আবার বাজারে সংকট দেখা দিতে পারে। ৩৯ টাকা দরে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ না করে আমদানি করলে কেজিতে সরকারের তিন টাকা করে খরচ কম হবে- যোগ করেন এ মিল-মালিক নেতা। (জাগো নিউজ)
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:৪০ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
এএস