‘জাতীয় যুব দিবস ২০১৭’ এ আত্মকর্সংস্থানের মাধ্যমে যুব কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ,ফরিদগঞ্জ উপজেলার ভাটিরগাঁও গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে যুব পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।
প্রতিবন্ধী কোটায় সে সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে এ কৃতিত্ব অর্জন করেন। তাঁর এ সাফল্যে ফরিদগঞ্জবাসী গর্বিত ও আনন্দিত। ১ নভেম্বর ২০১৭ জাতীয় যুব দিবসে সে যুব পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ সময় তাকে ক্রেস্ট, সনদ এবং ৪০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
ফরিদগঞ্জ যুব উন্নয়ন অফিসার মো. ইব্রাহিম মিয়া ও ডিপিওডির পরিচালক মমতাজ উদ্দিন মিলন এর অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় জাহিদুল ইসলাম যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক যুগ্ম-সচিব আবুল হাছান খান তার বাড়িতে এসে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ২৬ অক্টোবর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ফোন করে তার পুরস্কারের কথা নিশ্চিত করা হয়।
অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করলেন ফরিদগঞ্জের জাহিদ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে জাহিদুল ইসলাম এখন একজন সফল মানুষ। কৈশোর বয়স থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন প্রবাসে গিয়ে অনেক টাকা আয় করবেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি সুখের স্বর্গ বানাবেন। এক সময় প্রবাসে গিয়ে স্বপ্নের একাংশ পুরণ হলেও আবারও দু:স্বপ্ন এসে ঘিরে ধরে জাহিদের চারপাশ।
২০০১ সালে এসএসসি পাশ করার পর জাহিদ ঢাকাতে চলে যান। সেখানে এক আত্মীয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি নেন। বেশ ক’বছর চাকরি করার পর ২০০৭ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। সেখানে সে ইলেকট্রনিক কাজ করতো। ভালোই যাচ্ছিল তার দিন।
২০০৯ সালে কাজ করা অবস্থায় মেশিনে তার দু’হাতের পাঁচটি আঙুল কাটা পড়ে। মালয়েশিয়ার চিকিৎসা পছন্দ না হওয়ায় জাহিদ দেশে এসে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। সুস্থ হওয়ার পর বেকারত্ব তাকে যথেষ্ট পীড়া দিতে থাকে। যে করেই হোক তাকে সফল হতেই হবে। এ তাড়না থেকে জাহিদ ২০১০ সালে চাঁদপুরের বাবুরহাটে অবস্থিত যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ৩ মাসের একটি কোর্স করে কাজে নেমে পড়েন।
আত্মীয়-স্বজন থেকে কিছু টাকা হাওলাত আর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করে জাহিদ আজ কয়েক লাখ টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন। সে সাথে অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান।
শুরুতেই ছোট্ট একটি খামার দিয়ে শুরু করেন। যেখানে ২ শ’ মুরগি প্রতিপালনে জায়গা ছিলো। আজ সেখানে দু’টি বিশাল খামার। যাতে প্রায় ৪ হাজার মুরগি প্রতিপালন করা যায় । মুরগির খামারের পর একটি পুকুরে মাছ চাষ করলেও বর্তমানে তার পুকুর রয়েছে ৭ টি। সব পুকুরই ইজারা নেয়া। কয়েকটি পুকুরে রেনু থেকে পোনা করে তা বিক্রি করা হয়। নিষ্ঠা,একাগ্রতা আর পরিশ্রমে জাহিদুল ইসলাম আজ ক’ লাখ টাকার মূলধন তৈরিতে সক্ষম হন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন,‘এ পুরস্কারে আমি অনেক খুশি। আমাকে অনেক সম্মান দেয়া হয়েছে। আমি একটা পণ করেছি, আমাকে সফল হতেই হবে। এ ক্ষেত্রে যারা আমাকে অনুপ্রেরণা এবং সাহস যুগিয়েছেন, তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
ডিপিওডির পরিচালক মমতাজ উদ্দিন মিলন এ প্রতিনিধিকে বলেন,‘তাকে অনুপ্রেরণা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি। তার এ সফলতায় খুব ভালো লাগছে। সে আরো এগিয়ে যাক এ কামনা করি।’
ফরিদগঞ্জ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো.ইব্রাহিম মিয়া বলেন,‘জাহিদ অসহায় বেকার ছিল। তার ওপর তার হাতের ৫টি আঙুল নেই। তাকে আমরা যুব উন্নয়ন থেকে ট্রেনিং দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দিয়েছি। মুরগীর খামার আর মাছের চাষ করে আজ সে এখন স্বাবলম্বী।’
করসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৭ : ০৩ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ বুধবার
ডিএইচ