চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চলে দেশের অন্যতম বৃহত্তম ইকোনোমিক জোন ঘোষনা হওয়ায় এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে।
মতলব উত্তরের প্রমত্তা মেঘনার পশ্চিম পাড়ে ৮টি মৌজার প্রায় ৪ হাজার একর জমি নিয়ে শুরু হচ্ছে দেশের অন্যতম এই ইকোনোমিক জোন।
এরইমধ্যে কয়েক দফায় চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা স্থানীয় এমপি ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এর সাথে প্রকল্প পরিদর্শন করে গেছেন ।
এখলাছপুর, মোহনপুর ও জহিরাবাদ ইউনিয়নের বোরোচর, দক্ষিণ বোরোচর, চরকাশিম, খুনেরচর, চরওয়েষ্টারসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় চার হাজার একর সরকারি খাস জমিতে নির্মিত হচ্ছে এই ইকোনোমিক জোন। জানা গেছে, সেখানে থাকতে পারে পাওয়ার ষ্টেশন, সোলার পাওয়ার প্লান্ট, জুট মিল, লবন রিফাইনারী ষ্টেশন, ফুট প্রসেজিং জোন, কৃষি ও পাটজাত পণ্যের সংরক্ষণাগার, কৃষি বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণাগার এবং মেঘনা নদী থেকে আহরিত ইলিশ সংরক্ষণ ও রপ্তানির জন্য প্রসেজিং এরিয়াসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ ইকোনমিক জোন বাস্তবায়িত হলে চাঁদপুর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা, তথা মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের প্রায় ২ লাখ লোকের কর্ম ও বাসস্থানের সংস্থান হবে।
এদিকে ইকোনোমিক জোনের জমি বন্দোবস্ত করতে ও জমির নকশা তৈরি করতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উপজেলা ভূমি প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে ভূমি অফিসের কানুন গো (ভারপ্রাপ্ত) এনামুল হক বলেন, অর্থনৈতিক জোন দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা জমির সকল কাগজপত্র সুচারু রূপে তৈরি করার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক জোনের কাজের বাইরেও আমরা কাজ করছি বেড়িবাঁধের ভিতরে প্রস্তÍাবিত স্টেডিয়ামের কাজ, শিল্পকলা একাডেমি, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, উপজেলা মডেল মসজিদ, হাইটেক পার্কের জমি বন্দোবস্ত নিয়ে।
যেসব চরে বর্ষায় শুধু মাছ ধরা আর শীতকালে শুধু গৃহপালিত পশু পালন ছাড়া আর কোন কাজ হয় না। সেসব চরে এখন দেখা দিয়েছে সোনালী আভা।
চরের মানুষ এতো দিন ছিল সকল কিছু থেকে বঞ্চিত। ইকোনোমিক জোন হওয়ার সংবাদে তারা খুশিতে আত্মহারা এবং সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, এই ইকোনোমিক জোন বাস্তবায়ন হলে আমাদের আর বিদেশে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই আমরা বিদেশী টাকা রোজগার করতে পারবো। উপরোন্ত বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে আমাদের এখানে কাজ করতে পারবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে আমরা খুব দ্রুত স্বাবলম্বী হতে পারবো। আমরা কোনদিন দুর্গম এ চরে বিদ্যুতের মুখ দেখতে পারবো এ আশা কখনোই ছিল না। অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হলে আমাদের গ্রামগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।
গত ১১ অক্টোবর ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল ও মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, প্রকল্পটি প্রশাসনিকভাবে অনুমোদন পেয়েছে। পূর্বে প্রস্তাবিত জমি চাহিদায় একটু ত্রুটি আছে। তাই আমরা আবার নতুন করে ৩ হাজার ৩৭ একর জমির প্রস্তÍাবনা পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই ইকোনমিক জোন বাস্তবায়ন হলে শুধু চাঁদপুর নয় পুরো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশাল উন্নতি হবে এবং বিশাল যুব কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল এমনভাবে তৈরি করা হবে, নদী পথে যারা যাতায়াত করবে তারা এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবে।
প্রতিবেদক, খান মোহাম্মদ কামাল
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১:৫৩ পিএম, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭ সোমবার
ডিএইচ